‘আসলে সেদিন আমি, নামাযের পর বন্যার পানি দেখার উদ্দেশ্যে যায়। আমরা দূর থেকে হয়তবা মনে করি যে বন্যার পানি আসছে, তা দেখে ছবি তুলি, মজা নেয় আর ফেসবুকে আপলোড দেয়। আসলে বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে বা কাছে গেলে বুঝা যায়, তারা কতোটা কষ্টে আছে।’ গত শুক্রবার (১৭জুন) বিকালে শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের সৃষ্ট বন্যার পানিতে আটকেপড়া ছয়টি পরিবারের ২৬জন মানুষ উদ্ধারের ঘটনায় আজ বুধবার দুপুরে অনুভ‚তি জানতে চাইলে সোহান নামের এক স্বেচ্ছাসেবী এসব কথা বলেন।
সোহান বলেন, ওই দিন আমি গিয়ে দেখি স্কাউট সদস্য আশিক তার টিম নিয়ে রাস্তায় কাজ করছে, ফায়ার সার্ভিস তাদের মত করে কাজ চালাচ্ছে। আমাদের জাহিদুল হক মনির ভাই (স্থানীয় ইউপি সদস্য) সেদিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে। মহারশি নদীর ভাঙনের সম্মুখের এক বাড়িতে গর্ভবতী মহিলা, শিশুসহ ১৭ থেকে ১৮জন মানুষ আটকা পড়ছে। সবাই বলতেছিল, যেকোন সময় পানির ¯্রােতে ওই বাড়িটা ভেসে যেতে পারে। বাড়িটা ভেসে গেলে মারা যেতে পারে অনেকেই। পরে আমরা কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী ওই বাড়িতে যাওয়ার জন্য ফায়ার সার্ভিসের লাইফ জ্যাকেট পড়ে, পানিতে নামি। কিছু দূর যাওয়ার পর দেখি, ফায়ার সার্ভিসের একজন সদস্য লাইফ জ্যাকেট ছাড়া ওই বাড়িতে যাচ্ছে। পরে আমি আমার নিজের লাইফ জ্যাকেট খুলে, ওই সদস্যকে দেয়। এরপরেও আমি খালি গায়েই পানির ¯্রােত অতিক্রম করে অনেক চেষ্টার পর ওই বাড়িতে পৌঁছি।
তিনি আরও বলেন, ওই বাড়িতে গিয়ে ১২জন লোক আছে। পরে চেয়ারম্যান শাহাদৎ ভাইয়ের ব্যবস্থা করা নৌকা আমরা এক ঘন্টা চেষ্টা করে ওই বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে নৌকা দিয়ে একজন গর্ভবতী মহিলা উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। তার পর আমাদের কাছে সাত-আটটা লাইফ জ্যাকেট ছিল। লাইফ জ্যাকেট পরায়ে তাদের সাঁতরাইয়ে পাড় করি আমরা। পরে বাকিদের নৌকা দিয়ে পাড় করি। যেকোন মানুষের বিপদে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুরোধ করেন তিনি।
শুধু সোহান নয়। ওইদিন পাহাড়ি ঢলের সৃষ্ট বন্যার পানিতে আটকেপড়া ছয়টি পরিবারের ২৬জন মানুষকে উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সঙ্গে সোহানের মত আশিক, ফিরোজ, হাফিজুর, আবির, রুবেলসহ আরও সাত আটজন স্বেচ্ছাসেবী।
খৈলকুড়া গ্রামের আক্কেল আলী বলেন, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা আমার নাতনীসহ পরিবারের সবাইকে উদ্ধারে যে ভ‚মিকা রেখেছে তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। দোয়া করি আল্লাহতাদের দীর্ঘজীবি করুক।
ঝিনাইগাতী ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সদস্য মান্নান বলেন, ঢলের পানিতে সৃষ্ট বন্যায় আটকে পরিবারগুলোকে জনপ্রতিনিধিসহ স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে নিয়ে নিরাপদ স্থানে সরানোর কাজ করেছি। আমাদের কাজে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদৎ হোসেন, সদস্য মো. জাহিদুল হক মনির সহযোগিতা করেছেন। পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরা যে কাজ করেছে, তাতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তারা।
সৃষ্টি হিউম্যান রাইটস্ সোসাইটির চেয়ারম্যান আনোয়ার-ই-তাসলিমা প্রথা বলেন, ‘কিছু কাজ আছে যা নিজের বিবেকের তাড়নায় করতে হয়। সেগুলো জীবনে প্রশান্তি এনে দেয়, তা আরও নতুন করে ভালো কিছু কাজের উৎসাগ যোগায়। বন্যায় আটকেপড়াদের উদ্ধারে অংশগ্রহণকারী সকল স্বেচ্ছাসেবীদের স্যালুট জানাই।’