ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সুরক্ষার চ্যালেঞ্জ ও করণীয় বিষয়ে শেরপুরে ঝিনাইগাতীতে এক মতবিনিময় সভা হয়েছে। নাগরিক প্ল্যাটফরম জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটির আয়োজনে শনিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বনকালি এলাকার বৈরাগীপাড়া গ্রামে এ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
জনউদ্যোগ আহবায়ক শিক্ষক আবু কালাম আজাদ-এর সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন সমাজসেবী রাজিয়া সামাদ ডালিয়া, প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ কর্মী দেবদাস চন্দ বাবু, সংবাদিক হাকিম বাবুল প্রমুখ। এসময় শেপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মো. শরিফুর রহমান, কবি জ্যোতি পোদ্দার, রাজনীতিক সোলায়মান আহমেদ, আদিবাসী নেতা সুমন্ত বর্মণ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, আজকে আমাদের মানবসৃষ্ট কারণে প্রকৃতি বিরূপ আচরণ করছে। নিজেরা প্রকৃতিকে ধ্বংস করছি, যে কারণে প্রকৃতি প্রতিশোধ নিচ্ছে। গাছ কাটা, পাখি শিকার থেকে শুরু অতিরিক্ত কার্বণ নি:স্বরনে মতো মানুষের আগ্রাসী আচরনের কারণে আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তণ ঘটছে। এজন্য অসময়ে বন্যা, খরা, ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢলের মতো দুর্যোগ আমাদেকে গ্রাস করছে। এজন্য এখনই আমাদেরকে প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় সচেতন হতে হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষায় মাটির ঘরের পরিবর্তে টিনের ঘর এবং জলবায়ু সহনশীল ফসল আবাদ কতে হবে।
মতবিনিময় সভা শেষে ঝিনাইগাতীর বনকালী, তালতলা, ভাটপাড়া ও বৈরাগীপাড়া এলাকার সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগস্ত মাটির ঘরবাড়ী বিধ্বস্ত হওয়া ৭টি গারো পরিবার সহ ৩৬টি পরিবারের মাঝে আর্থিক পুণর্বাসন সহায়তা প্রদান করা হয়। ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রণমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইইডি), জনউদ্যোগ সংগঠক এবং শুভকাংখীরা এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সার্বিক সহায়তা করেন। এছাড়া সমাজসেবাী রাজিয়া সামাদ ডালিয়া এ অনুষ্ঠানে আরো ২টি পরিবারকে নতুন করে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া এবং প্রতিবন্ধী একজনকে হুইল চেয়ার প্রদানের ঘোষনা দেন। বিপদের দিনে জনউদ্যোগের সহায়তা পেয়ে উপকারভোগীরা খুশী হয়ে কুতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের শুরুর দিকে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদী উপজেলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সহ মাটির ঘরবাড়ী বিধ্বস্ত হয়ে অনেক পরিবার নি:স্ব হয়ে গেছে।
এদিকে, শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই ও চেল্লাখালি নদী এবং ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদীর ভাঙণ কবলিত এলাকাসমূহ পরিদর্শণ করেছেন। পে বিকেলে তিনি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সাম্প্রতিক বন্যার ভাঙণ ও করণীয় বিষয়ে জেলা প্রশাসন আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন।
অপরদিকে, এদিন বিকালে ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নের দিঘীরপাড় এলাকায় বন্যায় জেলা বিএনপি’র পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ১৯ পরিবারের মাঝে পুনর্বাসনের জন্য ১ বান্ডেল করে ঢেউটিন ও ৩ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক সংসদ্য মো. মাহমুদুল হক রুবেল এসব ঢেউটিন ও নগদ অর্থ সহায়তা বিতরণ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন শেরপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবু রায়হান রূপন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. শাহজাহান আকন্দ, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আব্দুল মান্নান, যুবদলের আহ্বায়ক মো. মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ। বিএনপি নেতৃবৃন্দ জানান, বিএনপি’ ভারপ্রাস্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের নির্দেশে জেলা বিএনপি’র সভাপতি মাহমুদু হক রুবেল বন্যার পর থেকে ঝিনাইগাতী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার দুর্গত ৭ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী ও ৬ হাজার মানুষের মাঝে তিন লাখ টাকা বিতরণ করেছেন।