শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বন্যহাতির দল তান্ডব চালিয়ে বন বিভাগের নার্সারী এবং কৃষকের বোরোধান ক্ষেত খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) রাতে উপজেলার মধুটিলা ইকোপার্কের ভিতরের নার্সারীতে ও পাশের পুর্ব সমশ্চুড়া গ্রামের পাহাড়ি ঢালে ফসলের মাঠে তান্ডব চালায়। এসময় হাতি তাড়াতে গিয়ে আহত হয়েছেন ওই এলাকার উপজাতি কৃষক বিজয় সাংমা (৫৫)। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।
সুত্র জানায়, নালিতাবাড়ীর গারো পাহাড়ি এলাকায় প্রায় দুই যুগ ধরে ৪০-৪৫টি বন্যহাতির দল তান্ডব চালিয়ে আসছে। এই হাতিগুলো ধান পাকার মৌসুমে প্রায় প্রতিরাতেই খাবারের সন্ধানে ফসলের মাঠে হানা দেয়। মঙ্গলবার গভীর রাতে বিনোদন কেন্দ্র মধুটিলা ইকোপার্কের ভিতরে ঢুকে তান্ডব চালিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে সুফল প্রকল্পের মিশ্র বাগান সৃজন করার জন্য তৈরিকৃত নার্সারীর ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। এতে চাপালিশ, ডেওয়া, অর্জুন, জারুল, পলাশ, জলপাই, বহেয়া ও আকাশমনি গাছের প্রায় ২৪ হাজার চারা খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করে ফেলে। পরে বন বিভাগের লোকজন বন্যহাতিকে তাড়া করলে পার্কের বাইরে গিয়ে পুর্ব সমশ্চুড়া গ্রামের বোরো ধান ক্ষেতে তান্ডব চালায়। এতে কৃষক শামছুল হকের ২৫ শতাংশ ও উপজাতি কৃষক আলবিনুছ সাংমার ২৫ শতাংশ জমির বোরো ধান ক্ষেত খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করে দেয়। এসময় হাতি তাড়াতে গিয়ে গুরুতর আহত হন পুর্ব সমশ্চুড়া গ্রামের বিজয় সাংমা (৫৫) নামের এক কৃষক। পরে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
স্থানীয়রা জানান, বন্যহাতির দলটি পাশের গভীর জঙ্গলে অবস্থান করছে। যে কোন সময় ফসলের মাঠে তান্ডব চালাতে পারে। তারা আরো জানান, গারো পাহাড়ের বেশ কিছু স্থানে দীর্ঘমেয়াদী মিশ্র বাগান সৃজন করায় বন্য হাতির অবাধ বিচরণ শুরু হয়েছে। তাছাড়া বোরো ধান, আমন ধান ও কাঁঠাল পাকার মৌসুমে পাহাড়ি এলাকার গ্রামগুলোর ঘরবাড়িতে টানা তান্ডব চালায় তারা। এসময় ভুক্তভোগীরা ডাকচিৎকার করে, শব্দ করে, ঢাকঢোল পিটিয়ে, পটকা ফুটিয়ে ও কেরোসিনের মশাল জ্বালিয়ে হাতি তাড়ান। বন্যহাতির দল দীর্ঘদিন যাবত তান্ডব চালিয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করে আসলেও কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এলাকার কৃষকের দাবী বন্যহাতির অত্যাচার বন্ধে সরকারীভাবে স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহন করা হোক।
বন বিভাগের মধুটিলা ফরেষ্ট রেঞ্জের রেঞ্জকর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার রাতে বন্যহাতির দল ইকোপার্কে ঢুকে নার্সারীতে তান্ডব চালিয়ে পা দিয়ে মাড়িয়ে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২৪ হাজার চারা ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এই চারাগুলো ঠিক না হলে চলমান অর্থ বছরের সুফল প্রকল্পের বাগান সৃজনে সমস্যা হতে পারে। তবে তিনি বলেন, বন্যহাতির তান্ডবে নিহত, আহত ও ফসলের ক্ষতিগ্রস্থদের সরকার ক্ষতিপুরণ দিচ্ছে। তাই বন্য হাতিকে রক্ষা করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কমাতে বন বিভাগ সজাগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন, বন্যহাতি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ ব্যাক্তিরা থানায় জিডি করে বন বিভাগ বরাবর আবেদন করলে বন বিভাগ তালিকা করে সরকারীভাবে ক্ষতিপুরণ দিচ্ছে। একইসাথে বন্যহাতির অত্যাচার বন্ধে সরকারীভাবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন করার কথাও জানান তিনি।