শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে গারো পাহাড়ি এলাকায় বন্যহাতি তান্ডব চালিয়ে বোরো আবাদের আধাপাকা ধান খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে বিনষ্ট করেছে। কষ্টার্জিত সোনার ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কিনা এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষক।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, মঙ্গলবার রাতে উপজেলার সীমান্তবর্তী পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বারোমারী খ্রিস্টান মিশন এলাকার ভেদরকোনা পাহাড়ি গোপে রাতব্যাপী তান্ডব চালিয়ে কৃষক রসুল মাহমুদের ১ একর ৫০ শতাংশ জমিসহ বেশ কয়েকজন কৃষকের জমির আধাপাকা বোরো ধানক্ষেতে প্রায় ৪০/৫০ টি বন্যহাতি তান্ডব চালায়। এসময় হাতির দল বোরোধান খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে বিনষ্ট করে।
বারোমারী আন্ধারুপাড়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক রসুল মাহমুদ বলেন, আমি ঋনধার করে দেড় একর জমি বোরোধান লাগিয়ে ছিলাম। মঙ্গলবার রাতে বন্যহাতির দল আমার আধাপাকা ধান খেয়ে সাবার করেছে। আমরা রাতে গ্রামবাসীরা মিলে মশাল জ্বালিয়ে ডাক চিৎকার করেও ফসল রক্ষা করতে পারিনি। আমি এখন খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি কিভাবে আমাদের সংসারের খাদ্যের যোগান দেব।
ওই এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক আক্কাস আলী, বিকাশ সাংমা, আলবেত সাংমা, সতেষ সাংমা, আবুল কাশেম, তিব্বত কোচ ও মেজেস সাংমাসহ বেশ কয়েক জন কৃষক জানান, প্রায় ৪০/৫০ টির মতো বন্যহাতির দল দিনের বেলায় গভীর জঙ্গলে লুকিয়ে থাকে আর পড়ন্ত বিকেলে খাবারের সন্ধানে নেমে আসে পাহাড়ের ঢালে রোপিত বোরোধান খেতে। বর্তমানে আধাপাকা সোনার ফসল রক্ষা করতে গ্রামের কৃষকরা দলবেঁধে রাত জেগে পাহাড়া দিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারছেন না। গত এক সপ্তাহ ধরে নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ি এলাকায় বিভিন্নস্থানে বন্যহাতির পাল হানা দিয়ে ফসল খেয়ে সাবার করছে। তাছাড়া প্রায় দুই যুগ ধরে বন্যহাতির দল ফসল কাটার সময় এলে ধানক্ষেত, গাছের কাঁঠাল ও সবজিক্ষেত খেয়ে সাবার করছে। আবার ফসলের মৌসুম শেষ হলে স্থানীয়দের বাড়িঘরে হানা দিয়ে লন্ডভন্ড করছে। সরকারের কাছে এর স্থায়ী সমাধান দাবি করেন তারা।
ময়মনসিংহ বনবিভাগের মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী বলেন, পাহাড়ি এলাকায় বন্যহাতি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার লক্ষে আবেদন নেওয়া হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনামতে তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার ববি বলেন, গারো পাহাড়ি এলাকায় বন্যহাতি তান্ডব এটি একটি জাতীয় ইস্যু। এই সমস্যা সমাধানে উধর্তন কৃতর্পক্ষের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া সরকার বন বিভাগের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। পাশাপাশি হাতি আর মানুষের মাঝে দ্ব›দ্ব নিরসনে এলাকার বাসিন্দাদের নিয়ে সচেতনতামুলক সভা করা হচ্ছে।