শেরপুরের নকলায সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে প্রচারের কল্যাণে ও নকলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুর রহমানের আন্তরিক প্রচেষ্টায় হারিয়ে যাওয়া মানসিক ভারসাম্যহীন অর্ধবাক প্রতিবন্ধী মা রত্নাকে ফিরে পেয়েছে অবুঝ দুই শিশু সন্তান। পাশাপাশি স্বস্থি ফিরে পেয়েছেন রত্নার মা, ভাই, বোন ও তার নিকট আত্মীয়রা।
সোমবার (৮ জুন) সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুর রহমানের অফিস কক্ষে রত্নাকে তার ভাই মাসুদ আলম, এলাকার বড় ভাই হুমায়ুন কবীর ও শেরপুর সদর উপজেলার ৯ নং ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য চরমুচারিয়া এলাকার মোস্তফার হাতে রত্নাকে হস্তান্তর করা হয়।
এসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুর রহমান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সারোয়ার আলম তালুকদার, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আলমগীর হোসেন, নকলা থানার এসআই সবুর উদ্দিন, নকলা প্রেসকাবের জাহাঙ্গীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন সরকার বাবু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খন্দকার জসিম উদ্দিন মিন্টু, দপ্তর সম্পাদক মো. নূর হোসাইন, সাংবাদিক মোফাজ্জল হোসেন, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ নকলা উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোশারফ হোসাইনসহ উপজেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ আগে রত্না সকলের অজান্তে বাড়ি থেকে বেড় হয়ে আর ফিরে যায়নি। এর পরথেকে বাড়ির লোকজন সম্ভাব্য জায়গায় তাকে খোঁজাখোঁজি করছিলেন। এমতাবস্থায় সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে রত্নার ছবিসহ লেখা প্রকাশের কিছুক্ষনের মধ্যে ‘শেরপুর ৩৬০ ডিগ্রী’ নামের একটি ফেইসবুক পেইজে ‘কেউ কি এই মেয়েটিকে চেনেন?’ এ শিরোনামে প্রতিবন্ধী রত্নার ছবিসহ একটি মানবিক লেখা পোষ্ট করা হয়। এর ঠিক ৬ মিনিটের মধ্যে শেরপুরের লিংকন তালুকদার নামে একজন কমান্ট বক্সে জানান যে, তিনি রত্নাকে চিনেন এবং রত্নার পরিচয় নিশ্চিত করে তার বড় বোনের মোবাইল নং দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে নকলায় কর্মরত কয়েকজন দায়িত্বশীল সাংবাদিক উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুর রহমানকে বিষযটি জানালে, তিনি রত্নার পরিবারে লোকজনের সাথে ওই মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করে তাদেরকে নকলায় আসতে বলেন।
এ সংবাদ পেয়ে রত্নার ভাই মাসুদ আলম, আরেক বড় ভাই হুমায়ুন কবীর ও শেরপুর সদর উপজেলার ৯ নং ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের স্থানীয় ইউপি সদস্য চরমুচারিয়া এলাকার মোস্তাফা আলী নকলায় এসে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে তাদের জিম্মায় মানসিক প্রতিবন্ধী বোন রত্নাকে নিয়ে বাড়ি ফিরেন। তারা বলেন নকলার সাংবাদিক ভাইদের ফেইসবুক প্রোফাইলে প্রচারের কল্যাণে ও নকলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুর রহমানের একান্ত প্রচেষ্টায় ৯ বছর ও ৩ বছর বয়সী অবুঝ দুই শিশু তাদের মাকে ফিরে পেলো।
রত্নার সহোদর বড় ভাই মাসুদ জানান, রত্না রাজধানী ঢাকার এক গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। প্রায় ১০ বছর আগে রত্নার সাথে শেরপুর সদর উপজেলার কসবা এলাকার মোশারফের সাথে বিয়ে হয়। দুই সন্তান জন্ম দেওয়ার পরে হঠাৎ করেই সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। শ্বশুড় বাড়ির ও নিজের পরিবারের লোকজন সাধ্যের মধ্যে চিকিৎসা করলেও কোন লাভ হয়নি। ফলে রত্না প্রায়ই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতেন এবং লোকজনের সহায়তায় তাকে আবার ফিরিয়ে আনা হতো। কিন্তু গত এক সপ্তাহ আগে সে সকলের অজান্তে নিখোঁজ হয়ে যায়। এর পর থেকে পরিবারের লোকজন তাকে খোঁজ ছিলেন, এমনকি তারা পুলিশকে রত্নার নিখোঁজের বিষয়টি মৌখিক ভাবে অবহিত করে রাখেন। অবশেষে নকলার ইউএনও মহোদয়ের মোবাইলে রত্নার খোঁজ পেয়ে তারা যেন হাতে আকাশ ধরার মতো খুশি হন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, রোববার (৭ জুন) বিকেল ৩টার দিকে অপরিচিত এক মহিলাকে এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করতে দেখে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মো. বোরহান উদ্দিনসহ কয়েকজন এগিয়ে গিয়ে রত্নার সাথে কথা বলে বুঝতে পারেন যে, রত্না প্রকৃত পক্ষে মানসিক প্রতিবন্ধী। পরে তাকে নকলা থানার মহিলা পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে সযত্নে থানা হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
এদিকে এ প্রতিবন্ধী মহিলা কোথা থেকে এসে উপজেলা পরিষদ চত্তরে ডুকলেন এবং কখন ও কিভাবে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে প্রবেশ করলেন তা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হন। পরে রত্নার শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি আছে কি-না তা নিশ্চিত করতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। অবশেষে সোমবার বিকেলে তাকে ভবঘুরে কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে প্রায় সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। এরই মধ্যে নকলার কয়েকজন দায়িত্বশীল সাংবাদিকদের ফেইসবুক প্রোফাইলে পোষ্ট ও শেরপুর ৩৬০ ডিগ্রী ফেইসবুক পেইজে রত্নার পরিচয় জানতে চেয়ে তার আত্মীয়সহ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লেখা পোষ্ট করা হয়। এর কিছুক্ষনের মধ্যে ফেইসবুকের কল্যাণে রত্নার পরিচয় মিলে এবং তার পরিবারের লোক জনের হাতে তাকে তুলে দেওয়া হয়।