নাঈম ইসলাম : বিশ্বকাপ ফুটবল মানেই প্রিয় দলের পতাকা আর জার্সি । বাসা বাড়ির ছাদ, রাস্তার মোড় থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গাড়ি, মোটরসাইকেল, রিকশায় পছন্দের পতাকা না উড়ালে অপূর্ণ থেকে যায় বিশ্বকাপের আনন্দ। ঘর থেকে বাইরে পা বাড়ালেই চোখে পড়ে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, পর্তুগাল সহ বিভিন্ন দেশের পতাকা । পতাকা জার্সি আর ইলেকট্রনিকসের দোকানে ফুটবল প্রেমিদের ভিড় জানান দিচ্ছে কয়েকদিন পরেই শুরু হচ্ছে ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর রাশিয়া বিশ্বকাপের মহাযজ্ঞ ।
বিশ্বকাপের ২১ তম আসরের পর্দা উঠার আগেই শেরপুরে ফুটবল ভক্তদের উন্মাদনা শুরু হয়ে গেছে । ৪ বছর পর পর দুয়ারে হাজির হওয়া এই সময়টুকু শুধুই বিশ্বকাপের । অন্য সব খেলা গোনার ধরার সময়টাও যেন নেই কারর । ফুটবল উন্মাদনায় মেতে উঠেছে তরুণ-তরুণীরা, থেমে নেই বয়ঃজৈষ্ঠরাও । করা হচ্ছে সমার্থক গোষ্ঠিদের কমিটি । ফুটবল ভক্তদের উত্তেজনা পাড়া মহল্লার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের ক্যাম্পাসগুলোতে জমজমাট ।
সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারের দেশ ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা । কিন্ত ফুটবলের হাত ধরেই যোজন যোজন দুরত্বের সেই ব্রাজিল, আর্জেন্টিনাই হয়ে গেছে বাংলাদেশের বন্ধুপ্রিয় দুটি দল । বাংলাদেশের ফুটবল প্রেমিরা মূলত দুইভাগে বিভক্ত- ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা । হলুদ আর আকাশি-নীলের জার্সি দুটোতে প্রাণ খুজেঁ পান লাল-সবুজের দেশের ফুটবল ভক্তরা । আর সে কারনেই উন্মাদনা শুরু হয়ে গেছে আগেভাগেই ।
বিশ্বকাপ এলেই জেলা শহর ছাড়াও অন্যান্য উপজেলা শহরগুলোও সেজে ওঠে সবুজ আর আকাশি নীলের পতাকা দিয়ে । গ্রামগুলোতেও লাগে প্রিয় দলের পতাকা উত্তোলনের হিড়িক । এখন আর ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা এ দুটি দলেই আটকে নেই এ জেলা বাসীদের সমর্থন । বর্তমানে জার্মানি, পর্তূগাল, স্পেন, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড সহ বিভিন্ন দলের সাপোর্টার দেখা যায় ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গুলোতে বেশ সরব ফুটবল ভক্তরা । ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম আর টুইটারে পছন্দ দলের রয়েছে “শেরপুর জেলা ফেসবুক ফ্যান গ্রুপ” । ফ্যান গ্রুপে নেইমারের সমার্থকরা তার গুনগান গেয়ে যদি পোষ্ট করে, লিওনেল মেসি, ওজিল কিংবা সিআর সেভেন ভক্তরদের একটুও দেরী হয়না, প্রিয় তারকাকে সেরা বানানোর চেষ্টার । “শেরপুর জেলা ব্রাজিল ফেসবুক ফ্যান গ্রুপ” এর মেম্বার ছাইফুল ইসলাম সাকিম বলেন, আমরা পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন । আমরাই সেরা আর এবারের ট্রফিটা নেইমারেরই । “শেরপুর জেলা আর্জেটিনা ফেসবুক ফ্যান গ্রুপ” এর মেম্বার ফিরোজ আহমেদ বাবু বলেন, মেসির তুলনা কেবলই মেসিই । রাশিয়াতে সেরাটা খেলার চেষ্টা করব, আমাদের কাছ থেকে ট্রফি কেউ নিতে পারবে না । “শেরপুর জেলা পর্তূগাল ফেসবুক ফ্যান গ্রুপ” এর গ্রুপ মেম্বার এস এস মমিত সরকার বলেন, ক্রিস্টিয়ানো রোনল্ডো বর্তমানে বিশ্বের সেরা তারকা । রাশিয়া বিশ্বকাপে ট্রফি নিয়ে আমরা নতুন ইতিহাসের জন্ম দিব ।
বিশ্বকাপের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে তার সাথে পাল্লাদিয়ে বাড়ছে পতাকা, জার্সি, টেলিভিশন আর আইপিএসের চাহিদা । শহরের স্পোর্টসের দোকানগুলোতে প্রিয় দলের জার্সি নিতে ভিড় জমাচ্ছে ফুটবল প্রেমিরা । হাজার হাজার কিলোমিটার দূরের প্রিয় দলের খেলা দেখার মাধ্যম টেলিভিশন । তাই যাদেও বাড়িতে টেলিভিশন নেই কিংবা ছোট টেলিভিশন, তারা তারা ভিড় জমাচ্ছেন ইলেকট্রিকসের দোকানে । আবার কেইবা পুরনোটাকেই নিয়ে যাচ্ছে সার্ভিসিং করতে । আর ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ইলেকটনিকস কোম্পানী গুলো নগত মূল্যছাড়, কিস্তির সুবিধা ও ক্র্যাচ কার্ডের আয়োজন করেছে । নিউমার্কেটের ওয়ালটন শোরুমে কথা হয় শহরের সজবরখিলার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক আব্দুস সালাসের সাথে । তিনি বলেন, বাসায় পুরনো ১৪ ইঞ্চি টিভি ছিল । কিন্ত ছেলেরা চাচ্ছে বড় পর্দায় বিশ্বকাপ খেলা দেখতে । তাই সপরিবারে বিশ্বকাপ উপভোগ করতে ২১ ইঞ্চি টিভি কিনতে এসেছি ।
ফুটবল মানেই প্রিয় দল নিয়ে চুলছেঁড়া বিশ্লেষণ আর টানটান উত্তেজনা । “কে সেরা” প্রশ্নে দুদলের ভক্তদের মধ্যে বাকবিতন্ডা ছাড়া তো বোধ হয় বিশ্বকাপই পায় পরিপূর্ণ আমেজ । হাজারো অনূভুতির জন্মদিতে আগামী ১৪ জুন রাশিয়ার মাঠে গড়াবে ফুটবল । কারো দল ট্রফি হাতে বাধঁভাজ্ঞা উচ্ছাসে মেতে উঠবে, কারো আবার সাক্ষী হবে অশ্রুসিক্ত আর স্বপ্নভজ্ঞের বেদনার । বিশ্বকাপকে বরণ করে নিতে ঠিক যতটুকু তৈরী রাশিয়া, শেরপুরও প্রস্তুত ঠিক ততটুকুই ।