রাজধানীর ফার্মগেটে পুলিশ কনস্টেবল মনিরুজ্জামান তালুকদার হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ায় খুন করা হয় মনিরুজ্জামানকে।
এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া এই হত্যাকাণ্ডের পর দুদিনে ১৪৫ জন ছিনতাইকারী গ্রেফতার হয়েছে। ঈদের আগেও ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চলে। ওই অভিযানে এক হাজার ৭৬৪ জন গ্রেফতার হয়।
সোমবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশ মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন।
শনিবার ভোরে ফার্মগেট সেজান পয়েন্টের সামনে নিহত হন পুলিশ সদস্য মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান তালুকদার। তাকে বুকে-পিঠে ছুরিকাঘাত করা হয়। তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত ছিলেন তিনি। গ্রামে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন শেষে ঢাকায় ফেরেন মনিরুজ্জামান।
তেজগাঁও রেলস্টেশনে নেমে হেঁটে কর্মস্থলের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় ঘটনাটি ঘটে। তার বয়স ৪০ বছর। হত্যাকাণ্ডে ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের সার্জেন্ট এসএম হাবিবুল্লাহ বাদী হয়ে ডিএমপির তেজগাঁও থানায় মামলা করেছেন।
মনিরুজ্জামান খুনের ঘটনায় গ্রেফতাররা হলো-রাব্বি, লিটন ও কামরুল। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ছিনতাই করার উদ্দেশ্যে মনিরুজ্জামানকে আক্রমণ করে তিনজন। এ সময় মনিরুজ্জামান তাদের বাধা দেন। তখন এক ছিনতাইকারী পেছন দিক দিয়ে তাকে ছুরিকাঘাত করে মানিব্যাগ ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়।
পুলিশ কর্মকর্তা ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, যে কোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগর পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগর পুলিশ রাস্তাঘাট, মার্কেট, শপিংমল ও কুরবানির পশুর হাটকেন্দ্রিক নির্বিঘ্নে নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করে। তারপরও ‘অ্যাবসোলুট’ সিকিউরিটি বলতে কোনো কিছু নেই। যদি অ্যাবসোলুট সিকিউরিটি বলতে কিছু থাকত, তাহলে হয়তো সারা বিশ্বে আলাদা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন হতো না।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এবার ঈদে দুটি বড় ঘটনা সবাইকে নাড়া দিয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো-ঈদের দিন রাতে হাতিরঝিল এলাকায় একজন সাংবাদিক ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে আহত হওয়া। আরেকটি হলো-একজন পুলিশ কনস্টেবল ছিনতাইকারীদের হামলায় নিহত হওয়া। সাংবাদিককে আহত করার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করেছি। এ বিষয়ে দ্রুতই সুসংবাদ দিতে পারব বলে আশা করি। আর কনস্টেবল মনিরুজ্জামানের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৩ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছি। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটিও জব্দ করতে সক্ষম হয়েছি।
মনিরুজ্জামানের হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, ঘটনার দিন খুব ভোরে কনস্টেবল মনিরুজ্জামান শেরপুর থেকে বাসে করে ঢাকায় আসেন। ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার আগে তিনি ফার্মগেটে রাস্তা পারাপার হওয়ার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় তিন ছিনতাইকারীর মধ্যে একজন প্রথমে মনিরুজ্জামানের রাস্তা অবরোধ করে। তার কাছে মানিব্যাগ চায়। কিন্তু মনিরুজ্জামান মানিব্যাগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করেন।
ছিনতাইকারী তিনজন হওয়ায় তিনি তাদের সঙ্গে পেরে ওঠেননি। তখন ছিনতাইকারীরা মনিরুজ্জামানের শরীরে একাধিক জায়গায় আঘাত করে তার মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনা ঘটিয়ে তারা পশ্চিম দিকে (মোহাম্মদপুর এলাকায়) চলে যায়।
পুলিশ কর্মকর্তা ড. খ. মহিদ উদ্দিন জানান, কনস্টেবল মনিরুজ্জামান প্রভিডেন্ট ফান্ডের ইন্টারেস্টের টাকা নিতেন না। তিনি খুব সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তি ছিলেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) সারোয়ার আলম খান জানান, গ্রেফতার হওয়া রাব্বি, লিটন ও কামরুলকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। তারা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
#যুগান্তর