শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠজুড়ে হলুদ সরিষার ফুলে ছেয়ে গেছে। তৈল জাতীয় শস্য সরিষা ফুলের সমারোহ চোঁখে পড়ছে চারদিকে। হলুদ ফুলে ফুলে মৌ মাছিরাও যেন মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পাড় করছে। শীত মৌসুমে প্রকৃতির অলঙ্কার হয়ে উঠেছে এই হলুদ সরিষার ক্ষেত। কিছু দিন পরেই মাড়াই করে তৈলের প্রস্তুত করা হবে এসব সরিষা। ভালো ফলন ও সরকারি প্রণোদনা পাওয়ায় এই উপজেলায় সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এবছর ৮০৭ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। গত বছর এ উপজেলায় ৭৫৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। গত বছরের চেয়ে এবার ৫২ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ বেশি হয়েছে। একই জমিতে বছরে একাধিক ফসল ফলাতে কৃষিতে সকল ফসলের প্রণোদনার অংশ হিসেবে সরিষা ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১হাজার ৭৫০ জন কৃষকের মাঝে সরিষার উফশী জাতের বীজ, ১০কেজি করে ডিএপি ও ১০কেজি এমওপি সার বিতরণ করা হয়। উল্লেখিত পরিমাণ উপকরণ সহযোগিতা ১জন কৃষক ১বিঘা জমি সরিষা চাষের জন্য গ্রহণ করেছেন। তৈলের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সরিষা চাষ বাড়ার আরেকটি কারণ হলো সরিষা ক্ষেতে মৌচাষ। মৌ চাষীরা জমির পাশেই বাক্স বসিয়ে মৌচাষ করছেন। মৌমাছির মাধ্যমে সরিষা ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হচ্ছে। এতে মধু চাষের পাশাপাশি সরিষার উৎপাদনও বাড়ছে। সরিষা চাষী কৃষক ও মৌচাষি উভয়েই লাভবান হচ্ছেন। এছাড়া সরিষার পাতা পচে জমির জৈব সারের চাহিদাও মেটায়। তাই প্রতি বছর কৃষি কর্মকর্তাদের পরামশর্, বিনামূল্যে বীজ ও সার সরবারহ করায় নালিতাবাড়ীতে প্রতি বছর সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।
কৃষক ইউনুছ আলী (৪০) বলেন, সরিষা চাষ করতে প্রতি একরে ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর ২০-২২ মণ সরিষা হওয়ার আশা করছি। এক মণ সরিষা বর্তমান বাজার মূল্য রয়েছে ২ হাজার ৭০০শত থেকে ৩হাজার টাকা। সরিষা চাষে যে সার আমরা ব্যবহার করি। তা পরবর্তীতে বোরো ধান রোপনের সময় কাজে লাগে। এতে আমাদের খরচ কিছুটা কম হয়।
কয়েকজন সরিষা চাষী জানান, দেশি সরিষার চেয়ে বারি ও বিনার উদ্ভাবিত সরিষার জাতগুলোর ফলন বেশি হয়। ফলে সরিষা চাষিরা এসব জাতের সরিষা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। তাই অনেকেই আমন ধান কাটার পর জমি পতিত না রেখে সরিষা চাষ করছেন। এরপর আবার বোরো ধান রোপণ করতে পারছেন। এতে একই জমিতে বছরে তিনবার ফসল উৎপাদন হচ্ছে।
নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর কবীর বলেন, কৃষক তাদের আবাদকৃত সরিষা কর্তন করে আবার ওই জমিতে বোরো ধান রোপন করবে। ভোজ্য তেলের উৎপাদন বাড়াতে সরকার সরিষা, তিসি ও সূর্যমুখীসহ অন্যান্য তৈল জাতীয় শস্য আবাদের ক্ষেত্র সম্প্রসারণে উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রেখেছে। তিনি আরো বলেন, আমরা সরিষা চাষে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী, বিনামূল্যে বীজ-সার সরবারহসহ সর্বদা নানা রকম পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছি। বর্তমান সরকারের কৃষকবান্ধব কর্মসূচিতে ২০২১-২২ ইং অর্থ বছরে ৮০৭ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। ফলে নালিতাবাড়ী উপজেলার তৈল জাতীয় শস্য উৎপাদনে নিবিড়তা বৃদ্ধি করতে সরিষা চাষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।