ইবি প্রতিনিধি; প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় হুমকি ও হয়রানির শিকার হয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে অধ্যয়নরত।
প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ার প্রতিবাদে ওই ছাত্রীর ছবি দিয়ে ফেক আইডি খোলা এবং ফটোশপে ছবি বিকৃতি করে ফেসবুকে পরিচিত বন্ধু-বান্ধব ও সিনিয়রদের রিকোয়েস্ট পাঠান ফারুক। এসময় তিনি ওই ছাত্রীকে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও পাঠান বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
অভিযুক্ত ছাত্রের নাম ফারুক হোসেন। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে অধ্যয়নরত।
মঙ্গলবার (১১ মে) বেলা ১১ টায় ভুক্তভোগী ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ফেসবুক গ্রুপে (ইবিয়ান) অভিযুক্তের ফেসবুক একাউন্ট ও হয়রানি মূলক কিছু স্ক্রিনশট শেয়ার করেন। এবং সন্ধ্যায় সাইবার বুলিংয়ের প্রতিকার, হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা ও অভিযুক্তের শাস্তির দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, ফেসবুক গ্রুপে ভুক্তভোগী ছাত্রী স্ট্যাটাসটি দিলে মুহূর্তের মধ্যে তা ভাইরাল হয়। এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল সমালোচনার সম্মুখীন হন অভিযুক্ত ওই ছাত্র। এসময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপন করে এবং প্রশাসনের কাছে তার বহিষ্কারসহ শাস্তির দাবি জানান। পরে স্ট্যাটাসটি সরিয়ে ফেলার জন্য ফেক আইডি থেকে হুমকি দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রী।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই ফারুক হোসেন তাকে সরাসরি ও মেসেঞ্জারে বিরক্ত করে আসছেন। করোনাকালীন ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার আগেও বেশ কয়েকবার কুপ্রস্তাব দেন। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তিনি তার পিছু নিয়ে বাজে মন্তব্য করতেন। এসময় ভুক্তভোগী ছাত্রী তার সহপাঠীদের বিষয়টি জানান। এর কিছুদিন পরেই করোনায় ক্যাম্পাস বন্ধ হয়।
পরে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকাকালীন গত সেপ্টেম্বর মাসের দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসলে ফের ফারুক তার পিছু নেন এবং নানা কুপ্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং ক্ষতি করার হুমকি দেন। তিনি ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগ নেতা ও বড় ভাইদের পরিচয় দিয়ে ভয় দেখান বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, ‘ প্রথমে আমি ব্যাপারটি স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছিলাম। কিন্তু তার কিছুদিন পর থেকে উনি আমার নামে খারাপ আইডি খোলা, কুপ্রস্তাব ও হুমকি ধামকির দেওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এছাড়া বিষয়টি আমার পরিবারও জানতে পেরেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষেই এমন একটি বাজে ঘটনায় আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। আমি অভিযুক্তের যথাযথ শাস্তি দাবি করছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে একাধিকবার কল করেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়ায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আমাকে ওই ছাত্রী হোয়াটস এ্যপে অভিযোগ পত্র পাঠিয়েছে। এই বিষয়ে আমি ভিসি স্যারের সাথে কথা বলেছি। ঈদের ছুটিতে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় এই মুহুর্তে কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। ঈদের পর আমরা দুই পক্ষের সাথে কথা বলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবো। গতকাল থেকে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর সঙ্গে আমি নিজে ও থানার মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু তার কোন খবর পাওয়া যায়নি। তবে যেহেতু সে আমাদের স্টুডেন্ট তাকে অবশ্যই পাওয়া যাবে।