আগে সব সময়ই দেখা যেতো শেরপুরের শ্রীবরদী সীমান্ত এলাকায় বাবুই পাখির বাসা। কিন্তু এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না বাবুই পাখির এই দৃষ্টিনন্দন বাসা। সময়ের বিবর্তন আর পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে আজ আমরা হারাতে বসেছি এ পাখিটি। সেই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে শিল্পী, স্থপতি ও সামাজিক বন্ধনের কারিগর বাবুই পাখি ও এর বাসা। তালগাছের কচিপাতা, খড়, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে উচুঁ তালগাছে নিপুণ দতায় বাসা তৈরি করত বাবুই পাখি। সেই বাসা দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা ভেঙে পড়ে না। শক্ত বুননের এ বাসা টেনেও ছেঁড়া যায় না। বড় আর্শ্চযের বিষয় হলো, ভারসাম্য রার জন্য বাসার ভেতরে থাকে কাদার প্রলেপ।
পাখি বিশেষজ্ঞরা জানায়, বাবুই পাখি বাসা তৈরির পর সঙ্গী খুঁজতে যায় অন্য বাসায়। পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুইকে সঙ্গী বানানোর জন্য নানা ভাবে ভাব-ভালবাসা নিবেদন করে এরা। বাসা তৈরির কাজ অর্ধেক হলে কাঙ্খিত স্ত্রী বাবুইকে সে বাসা দেখায়। বাসা পছন্দ হলে কেবল সম্পর্ক গড়ে। স্ত্রী বাবুই পাখির বাসা পছন্দ হলে বাকী কাজ শেষ করতে পুরুষ বাবুই পাখির সময় লাগে চারদিন। স্ত্রী বাবুই পাখির প্রেরণা পেয়ে পুরুষ বাবুই মনের আনন্দে শিল্পসম্মত ও নিপুণভাবে বিরামহীন কাজ করে বাসা তৈরির কাজ শেষ করে। প্রেমিক বাবুই যত প্রেমই দেখাক না কেন, প্রেমিকা ডিম দেয়ার সাথে সাথেই প্রেমিক বাবুই আবার খুঁজতে থাকে অন্য সঙ্গী। পুরুষ বাবুই এক মৌসুমে ছয়টি বাসা তৈরি করতে পারে। ক্ষেতের ধান পাকার সময় হলো বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবার পরপরই বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য স্ত্রী বাবুই তে থেকে দুধ-ধান সংগ্রহ করে।
বর্তমানে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে গ্রামাঞ্চল থেকে হারিয়ে যেতে বসছে প্রকৃতির এক অপরূপে সৃষ্টি বাবুই পাখি। প্রকৃতির বয়ন শিল্পী, স্থপতি ও সামাজিক বন্ধনের কারিগর নামে সমধিক পরিচিত বাবুই পাখি ও তার অপরূপ শিল্পসম্মত বাসা এখন আর গ্রামে গ্রামে চোখে পড়েনা।
প্রকৃতির বিরুদ্ধে মানুষের আগ্রাসী কার্যকলাপের বিরূপ প্রভাবেই আজ বাবুই পাখি ও তার বাসা হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে দেশের কিছু কিছু জায়গায় এখনো চোখে পড়ে বাবুই পাখির বাসা। বাবুই পাখি ও তার বাসা টিকিয়ে রাখতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা খুবই প্রয়োজন বলেও মনে করছেন পাখি প্রেমীরা। সেই সাথে সব সময় দেখা যাবে এই নিপুণ কারিগর পাখিকে।