মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাতের সময় প্রিয়া সাহা বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগ ও নিপীড়নের কথা তুলে ধরে সাহায্য চাইলে সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। শুরুতে সরকারের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা বেশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালেও প্রিয়া সাহাকে আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ দেয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আসার পর আর কাউকে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে দেখা যায়নি।
কিন্তু এরই মধ্যে প্রিয়া সাহাকে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ থেকে সাময়িকভাবে বহিস্কার করা হয়েছে।
এমতাবস্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানান প্রিয়া সাহা বাংলাদেশে এলে তাকে গ্রেফতারের পরিকল্পনা নেই সরকারের। বরং তাকে নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে ভাবছে সরকার।
বুধবার (২৪ জুন) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মোমেন বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষতের পরিপ্রেক্ষিতে প্রিয়া সাহা বাংলাদেশে এলে তাকে গ্রেফতারের পরিকল্পনা সরকারের আছে কিনা সেটা জানতে চেয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আমরা বলেছি তাকে গ্রেফতারের পরিকল্পনা আমাদের নেই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও মাল্টা সফর শেষে বুধবার ঢাকায় ফিরেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার আয়োজিত মন্ত্রী পর্যায়ের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলায় আমি। বাংলাদেশ সরকার থেকে চার সদস্যের প্রতিনিধি যোগ দেন। তবে প্রিয়া সাহা সেখানে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেননি।
ড. মোমেন বলেন, প্রিয়া সাহা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে এলে তাকে গ্রেফতার বা মামলার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে কিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যালিস ওয়েলস আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন। আমি তাকে বলেছি, প্রিয়া সাহাকে গ্রেফতারের পরিকল্পনা আমাদের নেই। আমরা তার বিরুদ্ধে মামলাও করতে চাই না। আমরা তাকে নিরাপত্তা দিতেও প্রস্তুত।
উল্লেখ্য, গত ১৬-১৮ জুলাই ওয়াশিংটনে স্টেট ডিপার্টমেন্টে ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের একটি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সম্মেলনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশ থেকেও অনেককে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল, যার মধ্যে প্রিয়া সাহাও ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার শুধু প্রিয়া সাহাকে আমন্ত্রণই জানায়নি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে যে ক্ষুদ্র প্রতিনিধি দল দেখা করেছে তার মধ্যেও তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এ সম্মেলনে হোয়াইট হাউজে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহা অভিযোগ করেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান লোক উধাও হয়ে গেছে। তার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জমিও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি প্রেসিডেন্টের সহায়তা চান যাতে করে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরা বাংলাদেশে থাকতে পারে।
তার এই মন্তব্যের পরে সরকার এবং বিভিন্ন স্তরের মানুষ তীব্র প্রতিবাদ জানায়। প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মামলা দায়েরের চেষ্টা করা হলেও সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, সরকার আগে প্রিয়া সাহার বক্তব্য শুনতে চায়। তাই তার বিরুদ্ধে কোনও মামলা করতে হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিতে হবে। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না পাওয়ায় কোথাও তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়নি।