প্রাচীনকাল থেকেই লাল গোলাপ ভালোবাসা ও সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। প্রেমের প্রস্তাব কিংবা প্রিয়জনের মান ভাঙাতে লাল গোলাপের চেয়ে অব্যর্থ উপহার আর হয় না। ঘরদোরের সাজসজ্জায়, বিশেষ করে বিয়েবাড়ি, বাসরঘর কিংবা কোনো অনুষ্ঠান মিলনায়তন সাজাতে লাল গোলাপ অনিবার্য উপকরণ। এর সুবাসিত ও সৌন্দর্যময় উপস্থিতি যেকোনো পরিবেশকে মোহনীয় করে তোলে। ত্বকের সৌন্দর্যচর্চা কিংবা চুলের যত্নে লাল গোলাপের পাপড়ি ব্যবহৃত হয়ে আসছে সেই অনাদিকাল থেকে। প্রাচীনকালে উচ্চবিত্তরা গোসলের সময় ব্যবহার করত লাল গোলাপ। পারফিউম বা সুগন্ধি তৈরিতে গোলাপ ফুল রীতিমতো জনপ্রিয় উপাদান। সুগন্ধি গোলাপজলের হরেক রকম ব্যবহার তো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে হরহামেশাই দেখতে পাই।
প্রিয়জনকে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার সময় কমবেশি সবাই হাতে একটি গোলাপ ফুল নিতে ভুলেন না। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ তার আবেগ এবং অনুভূতি প্রকাশ করতে গোলাপ ব্যবহার করে আসছে। চিনে গোলাপ চাষ শুরু হয় ৫ হাজার বছর আগে।
প্রাচীন গ্রিস এবং রোমে গোলাপ ফুল শুধু ধনীদেরই হাতের নাগালে ছিল। এ ছাড়াও গোলাপ ওষুধ, সুগন্ধি তৈরিতে এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত হত। ইউরোপে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে গোলাপের জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে।
গোলাপ ফুলকে অবজ্ঞাপূর্ণতা ও অবক্ষয়ের প্রতীক হিসেবে দেখা হত। খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে গোলাপ আবারও ইউরোপ এবং মধ্য প্রাচ্যের শিল্পী, কবি এবং লেখকদের মাধ্যমে মানুষেল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে।
যুদ্ধ এবং প্রেমের প্রতীক গোলাপ
পঞ্চদশ শতাব্দীতে, ইংল্যান্ডের যুদ্ধ দলগুলো গোলাপকে তাদের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করেছিল। সাদা গোলাপটি ইয়র্কের প্রতীক এবং ল্যানকাস্টারের জন্য লাল গোলাপ। ফলস্বরূপ যুদ্ধকে গোলাপের যুদ্ধ বলা হত, যা শেষ পর্যন্ত লাল গোলাপের সমর্থকরা জিতেছিল।
লাল গোলাপ বিশ্বজুড়ে বেশিরভাগ সংস্কৃতিতে প্রতীকী স্থান ধারণ করেছে। বিশ্বের অনেক জায়গায় এটি প্রেম, রোমেন্স, সৌন্দর্য এবং সম্মান প্রদর্শনের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।
লাল গোলাপ হলো ভ্যালেন্টাইন ডে এবং মা দিবসের মতো ছুটির দিনে উপহার দেওয়া সর্বাধিক জনপ্রিয় ফুল। এটি অনেক দেশের সামাজিক গণতান্ত্রিক দলগুলোরও প্রতীক। স্প্যানিশ, ফরাসি এবং পর্তুগিজ ভাষায় লাল শব্দের সেমার্থ হলো ‘রোজ’।