শেরপুরের নালিতাবাড়ীর গারো পাহাড় ফের প্রাকৃতিক বনে পরিনত হচ্ছে। ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা ফরেষ্ট রেঞ্জের আওতাধীন পাহাড়ি বনে বিলুপ্তপ্রায় গাছ দিয়ে সৃজন করা হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদী বন বাগান। বর্তমানে সবুজে সবুজে ছেঁয়ে গেছে গারো পাহাড়। জেলার পর্যটন এলাকা হিসেবে এখানে প্রতিদিন যোগ হচ্ছে নতুন মাত্রা। প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর পরিবেশ অবলোকন করতে দুর-দুরান্ত থেকে ভ্রমণ পিয়াসীসহ অনেক পর্যটক ছুটে আসছেন গারো পাহাড়ে।
বন বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, স্থানীয় অধিবাসীদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের লক্ষে বিগত ১৯৮৯-৯০ অর্থবছরে প্রাকৃতিক বন কেটে ন্যাড়া করে সৃজন করা হয় সামাজিক বন। এতে আকাশমনি, মিনজুরি ও ইউকিলিপটাচ গাছ লাগানোর ফলে গারো পাহাড়ের জলবায়ু ও বন্যপশু পাখিসহ জীববৈচিত্র হুমকীর মুখে পড়ে। বিলুপ্ত হতে থাকে প্রাকৃতিভাবে বেড়ে ওঠা বনজ গাছপালা। ২০০০ সাল থেকে পাহাড়ে পর্যাপ্ত খাদ্য না পেয়ে বন্যহাতির দল লোকালয়ে তান্ডব চালাতে থাকে। এরপর থেকে বন বিভাগ জীববৈচিত্র রক্ষা করতে ২০১৭-১৮ অর্থ বছর থেকে এসব পাহাড়ে পর্যায়ক্রমে বিলুপ্তপ্রায় গর্জন, ছাতিয়ান, হরিতকি, বহেরা, সোনালু, পলাশ, জারুল, ঢেউয়া, কাঞ্চন, জলপাই, শাল, পিতরাজ, অর্জুন, অশোক, আমলকি, আগর, কদম, কাঠবাদাম, কৃষ্ণচুড়া, কাঞ্চন, করছ, কামরাঙ্গা, গোলাপজাম, গাব, গামার, চিকরাশি, চালতা, চাম্পাফুল, চাপালিশ, জাম, জাম্বুরা, জগ্যডুমুর, ঢাকিজাম, তেঁতুল, তেলসুর, বড়ই, তুন, দেবদারু, নিম, নাগেশ্বর, পানিয়াল, বাজনা, বকুল, মহুয়া, রক্তচন্দন, রাবার, লোহাকাঠ শিলকড়ই, শিমুল, শিরিষ ও হলুদ গাছ লাগানো হয়েছে। এছাড়া এসব বনভুমিতে প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির পাহাড়ি গাছ বেড়ে উঠছে।
সুত্র জানায়, বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জের বাতকুচি, সন্ধ্যাকুড়া ও সমেশ্চুড়া বনবিটে মোট বনভুমি রয়েছে ৪ হাজার ২৩৫.২৮ একর। এরমধ্যে বিভিন্ন অর্থবছরে এ পর্যন্ত ৩৪৫ হেক্টর বনভুমিতে দীর্ঘ মেয়াদী মিশ্র বাগান সৃজন করা হয়েছে। ফলে গারো পাহাড় এখন প্রাকৃতি বনে পরিনত হতে চলেছে। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরে আসবে। আগের মতো গারো পাহাড়ে বাঘ, ভাল্লুক, শূকর, হাতি, হরিণ, বনমোরগ ও শিয়াল-শকুনসহ বিভিন্ন জাতের বন্যপশু পাখির অভয়াশ্রম তৈরি হবে। সেইসাথে পরিবেশ রক্ষায় স্থানীয় জলবায়ু বিশেষ ভুমিকা রাখবে।
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, বনজ সম্পদ বৃদ্ধি ও পরিবেশ রক্ষায় গারো পাহাড়ের মধুটিলা রেঞ্জে ইতোমধ্যে বেতবাগানসহ ৪০০ হেক্টর বন ভুমিতে মিশ্র বাগান সৃজন করা হয়েছে। বন ভুমিতে পর্যায়ক্রমে দীর্ঘ মেয়াদী মিশ্র বাগান সৃজন করা হবে। এসব মিশ্র বাগানে ঔষধী গাছসহ বিলুপ্তপ্রায় ৫০/৬০ প্রজাতির বিভিন্ন গাছ লাগানো হয়েছে। এতে গারো পাহাড় আস্তে আস্তে আগের মতো প্রাকৃতিক বনে পরিনত হবে। পাশাপাশি গারো পাহাড় থেকে কোটি কোটি টাকার বনজ সম্পদ আহরনসহ প্রাকৃতি পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষা পাবে।