পুলিশ কর্তৃক গাড়ি রিকুইজিশনের বিধান বাতিল চেয়ে আট বছর আগে করা রিট মামলা নিষ্পত্তি করে আজ বুধবার রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বলেছেন, জনস্বার্থে ছাড়া পুলিশ কোনো গাড়ি রিকুইজিশন করতে পারবে না। আদালতের এই নির্দেশনা কোনো পুলিশ কর্মকর্তা না মানলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদালত মোট ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন।
বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ রায় দেন। জনস্বার্থে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা রিট আবেদনে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে আদালত এ রায় দেন।
আদালতে রিট আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোশতাক হোসেন। এছাড়া অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ফিদা এম কামাল শুনানি করেন।
রায়ের পর অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, আইনে বিশেষ কারণে প্রয়োজনে গাড়ি রিকুইজিশন করার ক্ষমতা দেওয়া হলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ হয়রাণির শিকার হচ্ছেন। এতে অনেকের মানবাধিকারও লঙ্ঘন করা হচ্ছে। একারণেই রিট আবেদন করা হয়। আদালত আজ(বুধবার) ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ-১৯৭৬ এর ১০৩(ক) ধারার অধীনে পুলিশ যেকোনো গাড়ী রিকুইজিশন করতে পারে। এই বিধান চ্যালেঞ্জ করে এবং ওই আইনটি বাতিল চেয়ে ২০১০ সালে রিট আবেদন করা হয়। আদালত প্রাথমিক শুনানি শেষে ওইবছরের ২৩ মে রুল জারি করেন। একইসঙ্গে অন্তবর্তীকালীন নির্দেশনা জারি করেন। এই নির্দেশনায় বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া গাড়ি রিকুইজিশন না করা, গাড়ির যথাযথ ভাড়া পরিশোধ করা, হয়রানি বন্ধ করা, গাড়ি রিকুইজিশন করে ১৫ দিনের বেশি না রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় রুলের ওপর চ‚ড়ান্ত শুনানি শেষে গতকাল রায় দেন আদালত।
৯ দফা নির্দেশনা :
১. অবশ্যই জনস্বার্থে যেকোনো গাড়ি রিকুইজিশন করতে হবে। তা না করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
২. রিকুইজিশন করা গাড়ি কোনো কর্মকর্তা ব্যক্তিগত বা পরিবারের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন না। করলে অসদাচরণের জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩. প্রাইভেট কার, সিএনজি, ট্যাক্সি রিকুইজিশন করা যাবে না।
৪. প্রত্যেক পুলিশ স্টেশনে রিকুইজিশন করা গাড়ির তালিকা সংরক্ষণ করতে হবে।
৫. রিকুইজিশন সংক্রান্ত যেকোনো অভিযোগ তদন্ত করতে পুলিশ কমিশনার ব্যবস্থা নেবেন।
৬. রিকুইজিশন করা গাড়ির কোনো ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গাড়ির পেট্রোল খরচ বহন করতে হবে। চালকদের খাবার খরচও দিতে হবে।
৭. একই গাড়ি ছয় মাসের মধ্যে দুইবার রিকুইজিশন করা যাবে না।
৮. নারী, শিশু, রোগী বহনকারী গাড়ি রিকুইজিশন করা যাবে না।
৯. পুলিশ কমিশনার এসব নির্দেশনা পালনে একটি সার্কুলার জারি করে তা সব পুলিশ কর্মকর্তার কাছে পাঠাবেন এবং এসব নির্দেশনা মানা নিশ্চিত করবেন।