জার্মান তরুণী মার্টিনা ওবারহোলজনার, এখন যিনি পরিচিত মরিয়ম নামে। চলতি বছরের শুরুতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর দুবাইয়ে নিজের প্রথম রমজান পালন করছেন তিনি। ২৬ বছর বয়সি এই তরুণী পবিত্র কোরআনের একটি জার্মান সংস্করণের মাধ্যমে তার নতুন বিশ্বাসের শিক্ষায় বা ইসলামে শান্তি খুঁজে পেয়েছেন। মরিয়মের সেই গল্প তুলে ধরেছে সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমস।
চলতি বছরের শুরুর দিকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা জার্মান তরুণী। ছবি: সংগৃহীত
নিজের আধ্যাত্মিক যাত্রার প্রতি আলোকপাত করে পেশায় মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ মরিয়ম বলেন, ‘কিশোর বয়সেও আমি ইসলামের প্রতি গভীর সংযোগ অনুভব করতাম। খ্রিস্টান পরিবারে বড় হলেও, আমি সবসময় ইসলামের শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট ছিলাম। আমি শালীন পোশাক এবং প্রায়ই শীলা (মাথার স্কার্ফ) পরিধান করতাম।’
তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আমি দুবাইয়ের একটি ইসলামিক ইনফরমেশন সেন্টারে যাই এবং আনুষ্ঠানিকভাবে কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করি, এর মাধ্যমে আল্লাহর একত্ববাদে আমার বিশ্বাস এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে তার রাসূল হিসেবে গ্রহণ করার ঘোষণা দিয়েছি।
খালিজ টাইমস বলছে, ইসলাম গ্রহণের দিকে মরিয়মের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৪ বছর বয়সে। সেসময় তিনি প্রথম তার নিজ শহর মিউনিখের একটি মসজিদে গিয়েছিলেন। সেই কথা স্মরণ করে মরিয়ম বলছেন, ‘মসজিদে আন্তরিকতা ও উষ্ণতার সঙ্গে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছিল এবং তাতে আমি অভিভূত হয়েছিলাম। সেখানে আমি যে সহানুভূতি অনুভব করেছি তা আমার ওপর স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে।’
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মরিয়ম নিজেকে মুসলিম বন্ধুবান্ধব এবং পরিচিতদের সঙ্গে আরও যুক্ত করেন। তিনি বলেন,
তাদের সম্পর্কে যা আমাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছিল তা হলো- তারা সর্বদা দয়ালু, বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সাহায্যকারী মানুষ, যা আমার ইসলাম গ্রহণের অন্যতম প্রধান কারণ।
গত বছর দুবাইয়ে চাকরির সুযোগ পান মরিয়ম। সেই চাকরি নিয়ে পরবর্তীতে সন্তুষ্ট হতে না পারলেও, মূলত দুবাইয়ে গিয়েই তিনি ইসলামকে আরও গভীরভাবে অধ্যয়ন করার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানান। মরিয়ম বলেন, ‘এরপর আমি একজন বন্ধুর কাছে যাই এবং পবিত্র কোরআনের একটি জার্মান অনুবাদ দিতে অনুরোধ করি।’
২০২৩ সালের মাঝামাঝি কয়েক সপ্তাহের জন্য ইন্দোনেশিয়ায় গিয়েছিলেন মরিয়ম। সেখানে তিনি নিজেকে ইসলামিক সংস্কৃতিতে নিমজ্জিত করেন। এরপর নিজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গত বছরের আগস্টে জার্মানিতে ফিরে গেলেও, দুবাইয়ে যাওয়ার কথা তার মাথায় গেঁথে ছিল।
ফলে আবারও দুবাইয়ে চাকরির জন্য আবেদন করতে শুরু করেন মরিয়ম। অবশেষে ভালো সুযোগও পেয়ে যান। ২০২৩ সালের অক্টোবরে মরিয়ম ফের দুবাইতে চলে আসেন এবং সেখানেই প্রথমবার কোরআন পড়তে শুরু করেন। সেই কথা স্মরণ করে তিনি বলেন,
আমি সেই অনুভূতি প্রকাশ করতে পারব না। মাত্র ৫০ পৃষ্ঠা পড়ার পরই আমি বুঝতে পারলাম, আমি ইসলাম গ্রহণ করতে চাই।
আর মরিয়মের সেই যাত্রা চলতি বছরের শুরুর দিকের এক শুক্রবারে কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করার মধ্য দিয়ে শেষ হয়। খালিজ টাইমস বলছে, মরিয়ম এখন ইসলাম সম্পর্কে তার জ্ঞানের গভীরতা আরও বাড়ানোর এবং রমজানের রুটিন মেনে চলার দিকে মনোনিবেশ করছেন।
তিনি বলছেন, ‘আমি সেহরির জন্য সময়মতো ঘুম থেকে উঠি এবং সন্ধ্যায় আমার অ্যাপার্টমেন্টে ইফতার করি। আমার সেহরিতে সাধারণত একটি কলা বা দই থাকে।’ সোশ্যাল মিডিয়ায় দেয়া এক পোস্টে মরিয়ম দুবাইতে একজন মুসলিম হিসাবে তার প্রথম রমজান উপভোগ করার বিষয়ে আনন্দও প্রকাশ করেছেন।