‘আমি ঝিনাইগাতী ইউএনও বলছি, আপনি মিষ্টি তৈরীতে অনেক ভেজাল করেন। আমাকে ৪০ হাজার টাকা না দিলে আগামীকাল হোটেলে এসে অনেক টাকা জরিমানা করব এবং জেল দিব।’ এমন ফোন পেয়ে মো. ফরিদ মিয়া নামের এক হোটেল ব্যবসায়ী প্রতারক চক্রের কাছে খোয়ালেন ৪০ হাজার টাকা।
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার তিনানী বাজারের ‘বিসমিল্লাহ মিষ্টান্ন ভাÐার’ নামের হোটেলে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ইউএনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি সর্তকমূলক পোস্ট দিয়েছেন। একই সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আল মাসুদ।
তিনানাী বাজারের ‘বিসমিল্লাহ মিষ্টান্ন ভাÐার’ হোটেলের মালিক মো. ফরিদ মিয়া বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার মাগরিবের আযানের আগে উপজেলা স্যানেটারি ইন্সপেক্টর আমার মোবাইলের নম্বরে ফোন দিয়ে বলেন, আপনার (হোটেল মালিক) মোবাইল নম্বরটি ইউএনও স্যার চেয়েছেন। আমি আপনার নম্বরটি দিয়েছি, ইউএনও স্যার ফোন দিলে ভদ্রভাবে কথা বলবেন এবং ওনি যা বলবেন তাই করবেন। কিছুক্ষণ পরে ০১৯২২৯৪৬৭৭৬ নম্বর থেকে ফোন দিয়ে ইউএনও পরিচয় দিয়ে বলেন, আমি মিষ্টি তৈরীতে ভেজাল করি। তাই তার মোবাইলের বিকাশ নম্বরে ৪০ হাজার টাকা পাঠাতে হবে। একই সঙ্গে বলেন টাকা না দিলে আগামীকাল হোটেলে এসে অনেক টাকা জরিমানা ও জেল প্রদানের হুমকি প্রদান করেন। আমি ভয়ে মোবাইল ব্যাংকের বিকাশ নম্বরে ৪০ হাজার টাকা পাঠাই। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে প্রতারণার বিষয়টি প্রকাশ পায়।’
ঝিনাইগাতী বাজারের সাঈদ হোটেলের মালিক মো. আবু সাঈদ নামের ব্যবসায়ী বলেন, ‘ইউএনওর পরিচয় দিয়ে একটি প্রতারক চক্র বৃহস্পতিবার পাঁচটার দিকে আমার মোবাইলে ফোন দিয়ে টাকা দাবি করে। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হলে আমি ঘটনাটি ইউএনও সাহেবকে জানাই।’
উপজেলা স্যানেটারি ইন্সপেক্টর আব্দুল মুন্নাফ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সাড়ে চারটার দিকে ০১৯২৯৬৮৬৭৮১ এ নম্বর থেকে ফোন দিয়ে ইউএনও স্যারের পরিচয় দিয়ে বলেন, জরুরী ভিত্তিতে জেলায় তথ্য পাঠাতে হবে। তাই উপজেলার মিষ্টি তৈরী করে এমন হোটেলের মালিকের নাম ও তাদের ফোন নম্বর চান। আমি বেশ কয়েকজন হোটেল মালিকের নাম ও মোবাইল নম্বর দেয় তাদের।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরে আমি নিজেও হোটেল মালিকদের মোবাইলে ফোন দিয়ে ইউএনওর স্যার ফোন দিলে তারা যেন ভদ্রভাবে কথা বলে এবং যা তথ্য চান, তাই যেন দেন। কিন্তু মাগরিবের নামাযের আগে তিনানী বাজারের মদিনা হোটেলের মালিক ফোন দিয়ে আমাকে জানান, ইউএনও স্যার ফোন দিয়ে ৫০ হাজার টাকা চেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হলে ইউএনও স্যারের সরকারী মুঠোফোনে ফোন দিয়ে বিষয়টি স্যারকে জানাই। কিছুক্ষণপরে জানতে পারি বিসমিল্লাহ হোটেলের মালিক ফরিদ বিকাশের মাধ্যমে প্রতারক চক্রের কাছে ৪০ হাজার টাকা পাঠাইছেন।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আল মাসুদ বলেন, ‘সন্ধ্যায় বিভিন্ন হোটেল ব্যবসায়ী আমাকে মোবাইল করে বিষয়টি জানায়। সঙ্গে সঙ্গে আমি সবাইকে এ বিষয়ে সর্তক করে দিই।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি কেউ ইউএনওর পরিচয় দিয়ে কোনো কিছু দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে টাকা-পয়সা দাবি করে তাহলে দ্রæত তার সরকারি মুঠোফোন নম্বরে কল করে জানানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’