করোনা ভাইরাসের ধকল কাটিয়ে শেরপুর জেলার অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র নালিতাবাড়ী উপজেলায় স্থাপিত ‘মধুটিলা ইকোপার্ক’ এবারের শীত মৌসুমে ভ্রমনপিয়াসীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে। সীমান্তবর্তী এই পার্কের চারপাশে উচু-নিচু পাহাড়ীটিলা, কৃত্রিম লেক আর সবুজের সমারোহ দেখতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দর্শনার্থী ও ভ্রমন পিয়াসীরা ভীড় জমাচ্ছেন। প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে বর্তমান মৌসুমে সপ্তাহের প্রতিদিন প্রায় হাজারো দর্শনার্থী সমবেত হয়ে বনভোজন বা শিক্ষা সফর করে কর্মক্লান্তি ভুলে আনন্দচিত্বে ফিরে যান নিজগৃহে। তাই ইট, কাঠ, কংক্রিট আর পাথরে গড়া নগর জীবনের কোলাহল ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারেন এই পার্ক থেকে।
শেরপুর জেলা শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার, নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তরে পোড়াগাঁও ইউনিয়নে ময়মনসিংহ বন বিভাগের ব্যবস্থাপনায় মধুটিলা ফরেষ্ট রেঞ্জের সমশ্চুড়া বন বীটের আওতায় ৩৮০ একর বনভূমিতে গারো পাহাড়ের মনোরম পরিবেশে সরকারীভাবে বিগত ২০০০ সালে নির্মিত হয় ‘মধুটিলা ইকোর্পাক’ তথা পিকনিক স্পট। স্থাপনকাল থেকেই শীত মৌসুমে এপার্কে পর্যটকরা ভীড় জমান।
এই পার্কটির প্রধান ফটক পেড়িয়ে ভেতরে ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়বে সারি সারি গাছ। রাস্তার ডান পাশে খোলা প্রান্তর আর দু-পাশে রকমারি পণ্যের দোকান। সামনের ক্যান্টিন পার হলেই পাহাড়ী ঢালু রাস্তা। এর পরই হাতি, হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, বানর, কুমির, ক্যাঙ্গারু, মৎস্য কন্যা, মাছ ও পাখির ভাষ্কর্য। পাশের আঁকাবাঁকা পথে ঘন গাছের সারি লেকের দিকে চলে গেছে। তারপর কৃত্রিম লেকের উপর ষ্টারব্রীজ। যা দেখে প্রাণ পায় নব চেতনা, মন হাড়িয়ে যায় যেন প্রকৃতির মাঝে। লেকে পেডেলে বোডে চরে ঘুরাফেরার পর পাহাড়ের চুড়ায় পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে আরোহণ করলেই নজর কেড়ে নেয় ভারতের উঁচু নিচু পাহাড় আর সবুজের সমারোহ। প্রকৃতির এই নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন ভ্রমন পিয়াসীরা।
এবারের বাংলা সনের ইজারাপ্রাপ্ত ইজারাদার রহমান ট্রেডার্সের প্রতিনিধি হামিদুর রহমান জানান, ইকোপার্কে ঢুকতে জনপ্রতি ১০টাকা, বড় বাস ৬০০টাকা, মিনিবাস ৪০০টাকা, মাইক্রোবাস ২০০ টাকা, মোটরসাইকেল ৩০ টাকায় টিকেট কাটার ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে আলাদা আলাদা ফি দিয়ে প্যাডেল বোট চালানো, পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠা, শিশু পার্কে প্রবেশের সুযোগও রয়েছে। শুধু দিনের বেলায় ব্যবহারের জন্য ভ্যাটসহ ৪ হাজার ৭০২ টাকার বিনিময়ে পাহাড়ের চূড়ায় চার কক্ষ বিশিষ্ট শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) সুসজ্জিত মহুয়া নামের রেষ্ট হাউজ রয়েছে। এ রেষ্ট হাউজ ব্যবহার করতে চাইলে মধুটিলা রেঞ্জঅফিস, ময়মনসিংহ অথবা শেরপুর বন বিভাগ অফিসে বুকিং দিতে হয়। এছাড়াও এখানে রয়েছে ডিসপ্লে¬ মডেল, তথ্যকেন্দ্র, গাড়ী পার্কিং জোন, ক্যান্টিন, মিনি চিড়িয়াখানা, বন্য প্রাণীর বিরল প্রজাতি পশু-পাখির ভাষ্কর্য। আরো আছে জীবন্ত হরিণ, ঔষধী ও সৌন্দর্যবর্ধক প্রজাতির বৃক্ষ এবং ফুলসহ বিভিন্ন রঙ্গের গোলাপের বাগান।
মধুটিলা ইকোপার্কের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জকর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে দীর্ঘদিন মধুটিলা ইকোপার্কটিও বন্ধ ছিল। এখন সরকারী সিদ্ধান্তে খুলে দেয়ায় এখানে প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা ভীড় জমাচ্ছেন। তবে আমরা দর্শনার্থীদের করোনা ভাইরাস থেকে নিরাপদে থাকতে মাস্ক পরিধান করতে উৎসাহিত করছি।
এই ইকোপার্কটি সীমান্তবর্তী হওয়ায় এখান থেকে ভারতের দুরত্ব ১ কিলোমিটার। যুগ যুগ ধরে সীমান্তবর্তী এ পাহাড়ে গারো আদিবাসীরা বসবাস করে আসছেন। এখান থেকে খুব সহজে আদিবাসী গারোদের জীবনধারা ও সংস্কৃতি দেখারও সুযোগ রয়েছে।
রাজধানী ঢাকা থেকে মধুটিলা ইকোপার্কের দুরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। ঢাকা বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুর আসতে হবে। শেরপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী বাজার পর্যন্ত লোকাল বাস সার্ভিস রয়েছে। এছাড়াও শেরপুর থেকে ভাড়ায় সিএনজি অথবা মটরসাইকেলযোগে মধুটিলা ইকোপার্কে আসা যায়। অথবা নিজস্ব গাড়ীতে সরাসরি ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুর পৌঁছানোর আগে নকলা উপজেলা থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর হয়ে ইকোপার্কে আসা সহজ হয়। সব মিলিয়ে শীত মৌসুম ছাড়াও সম্ভাবনাময় এই ইকোপার্কে প্রায় সারা বছরই দেশি-বিদেশি পর্যটক ও ভ্রমন পিয়াসীদের ভীড় লেগেই থাকে।