নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য পেঁয়াজের বাজারমূল্য ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে ২০১৬ সালে রোজার আগে সরকার পেঁয়াজের ওপর থেকে আমদানি শুল্ককর প্রত্যাহার করে। এরপর আর শুল্ককর সংযোজন হয়নি। তবে অতিরিক্ত লাভ করতে বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট হঠাৎ করেই কেনো অস্বাভাবিক হারে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে! আর এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। পেঁয়াজের দাম এরই মধ্যে ২৪০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। সর্বকালের সব রেকর্ড ভেঙেছে পেঁয়াজের দাম।
বাংলাদেশে বছরে ১৭ থেকে ১৯ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন করে। যা কিনা পেঁয়াজের মোট চাহিদার ৬০%। চাহিদার বাকি ৪০% অথবা ৭ থেকে ১১ লাখ টন পেঁয়াাজ আমদানি করতে হয়। আমদানির ৯৫% আসে ভারত থেকে। বাকি পেঁয়াজ আসে মিয়ানমার, মিশর, তুরস্ক থেকে। ভারতের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর কোনো দেশেই পেঁয়াজ রপ্তানি করতে পারছেন না। ভারত পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী দেশ। পৃথিবীতে বছরে মোট যে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়, তার প্রায় ২৫ শতাংশই উৎপন্ন হয় ভারতে। আর দেশটির মধ্যে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপন্ন হয় মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকে; সে দেশের মোট উৎপাদনের ৪৫ শতাংশই উৎপন্ন হয় এই দুটি রাজ্যে। এ ছাড়া গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ আর পশ্চিমবঙ্গেও পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়। ভারত তার গোটা জনগোষ্ঠীর মোট চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন করে। তাদের বার্ষিক মোট চাহিদা ১৫–১৬ মিলিয়ন টন, আর বার্ষিক উৎপাদনের পরিমাণ ২২–২৩ মিলিয়ন টন। তারা উদ্বৃত্ত পেঁয়াজ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে। দ্য ইকোনমিক টাইমস–এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত ২০১৮ সালে ১৯ লাখ ৯০ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানি করেছে।
কিন্তু হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে সংকটের মূল কারণও হতে পারে। কয়েকদিন আগে ভারত রপ্তানির সর্বনিম্ন মূল্য প্রায় তিনগুণ বাড়িয়ে ৮৫০ ডলার নির্ধারণ করে ফলে পরদিনই বাংলাদেশের বাজারে দাম বেড়ে যায়। যার ফলে বাংলাদেশে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন কথা হচ্ছে এর সমাধান কি; আজো কি হবে পেঁয়াজ সংকটের সমাধান?
মনিটরিং বাড়াতে হবে-
আমদানি বন্ধের কারণে বাজারে যদি পেঁয়াজের হঠাৎ সংকট দেখা দিলে, উৎপাদনের পাশাপাশি বাজার মনিটরিংয়ের দিকে নজর বাড়ানো দরকার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসন মনিটর করতে হবে- যে দাম বাড়ার আসল কারণটা কী? সেটা কি চাহিদা-যোগানের ভারসাম্যহীনতার কারণে হয়েছে নাকি ব্যবসায়ী ও মধ্যসত্ত্বভোগীরা আর্টিফিশিয়াল ক্রাইসিস তৈরি করেছে। কারণ লাগামহীন দাম বাড়ার সুযোগ কিন্তু অনেকে নিতে পারে, সুপার নরমাল প্রফিট করতে পারে। কিন্তু সেটা যেন জুলুমের পর্যায়ে না যায়।
বাজারে যে পেঁয়াজের সংকট রয়েছে সেটা অনুমান করে সরকারের আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। ভারত আমদানি বন্ধ করেছে ঠিক আছে। কিন্তু অর্ডার দিয়ে অন্য দেশ থেকে আনতে আনতেও তো অনেক সময় লাগে। জাহাজে করে আসতেও তো সময় লাগে। তবে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন বিদেশ থেকে বিমানে করে পেঁয়াজ আনা হচ্ছে। এছাড়া নতুন দেশী পেঁয়াজ উঠতে আর কিছুদিন সময় লাগবে, যদি সময়মত দেশী পেঁয়াজ বাজারে আসে তাহলে হয়তো পেঁয়াজের বাজার কমে আসতে পারে। ইতোমধ্যে বাজারে উঠেছে পাতা পেঁয়াজ, তবে দাম এখনো ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি।
লেখক- শাকিল মুরাদ
সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী
মেইল: exclusivebyshakil@gmail.com
শেরপুর টাইমস ডট কম-এর মতামত পাতায় প্রকাশিত লেখার দায়ভার লেখকের নিজের। এর দায় শেরপুর টাইমস কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করবে না। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে শেরপুর টাইমসের মতামত পাতায় আপনিও আপনার মতামত জানাতে পারেন sherpurtimesdesk@gmail.com এই মেইলে।