অতিবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শনিবার ভোররাতে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর বাজারসহ ৫টি ইউনিয়নের প্রায় ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। ১ অক্টোবর রবিবার উজানের পানি ভাটিতে প্রবেশ করে নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত গ্রামগুলো হচ্ছে- কালিনগর, সারিকালিনগর, দড়িকালিনগর, দীঘিরপাড়, চতল, লঙ্কেশ্বর, পাইকুড়া, জরাকুড়া, কোনাগাঁও, নয়াপাড়া, দাড়িয়ারপাড়, কান্দুলী, জিগাতলা, বনগাঁও, হাঁসলিবাতিয়া, রাঙ্গামাটিয়া, হাতিবান্ধা, বেলতৈলসহ প্রায় ১৫টি গ্রাম। এসব গ্রামের প্রায় ৪ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ফলে ওই পরিবারগুলোর খাবারসহ গবাদী পশুর খাবারের সমস্যা দেখা দিয়েছে। এছাড়া ওই এলাকার রোপা আমন ধান পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এতে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে টানা দশ ঘন্টা উপজেলায় তবে সদও বাজারের পানি নেমে গেছে। মুষলধারে বৃষ্টি হয়। সেইসঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবল বেগে মহারশি নদীর রামেরকুড়া এলাকার বেড়িবাঁধের পুরোনো ভাঙ্গা অংশ দিয়ে সদর বাজারে প্রবেশ করে। এতে সদর বাজারের তিন শতাধিক দোকানপাটে পানি প্রবেশ করায় ১২ঘন্টা বন্ধথাকে। তবে এখন বাজারের পানি নেমে যাওয়ায় স্বাভাবিকতা ফিরে পেয়েছে বাজারের অবস্থা। কিন্তু নিন্ম অঞ্চল এখনো প্লাবিত রয়েছে।
উপজেলা গৌরিপুর ইউনিয়নের বনগাঁও চত্তল গ্রামের সমশের ও মোক্তার মিয়া জানান, পাহাড়ী ঢলের পানি প্রবেশ করে তাদের বসতঘরের ভিটা ডুবে থাকায় রান্না বন্ধ রয়েছে। ফলে তারা ঘরে থাকা শুকনা খাবার খেয়ে রয়েছে। গবাদী পশুর চিৎকারে খাবারের সন্ধানে উচুঁ জায়গা খুঁজতেছেন। বালিয়াগাঁও গ্রামের কৃষক মো. সাদ্দাম মন্ডল জানান, তার তিনটি পুকুর প্রায় ১একরের হবে। সমস্ত মাছ পানিতে ভেসেগেছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ফয়জুন্নাহার বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৪ হাজার ৬৭৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ করা হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে প্রায় ১২শ’ হেক্টর জমির ধান নিমজ্জিত রয়েছে।
রবিবার মালিঝিকান্দা ইউপি চেয়ারম্যান মো.নুরুল ইসলাম তোতা জানান, তার ইউনিয়নে ঢলের পানিতে এলাকাগুলে প্লাবিত রয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকরা জমিতে রোপা আমন আবাদ ঠিকমত করতে পারিনি। তবে যতটুকু আবাদ করেছে সব পানির নিচে রয়েছে।
ধানশাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো.শফিকুল ইসলাম জানান, সোমেশ্বরী নদীর পানির তোড়ে চাপাতলী ব্রিজের কাছে কান্দুলী-মাঝাপাড়া গ্রামের সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় ওই পথে যাতায়াতকারীদের ধানশাইলসহ উপজেলার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, আকস্মিক এ ঢলে প্রায় ৪শতাধিক পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। প্লাবিত এলাকার রোপা আমন ধান নিমজ্জিত ও অর্ধশতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। পানিবন্দী পরিবারগুলোর দুর্ভোগ ও ভোগান্তি নেমে এসেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা করিম বলেন, পানিবন্দি পরিবারের তালিকা প্রণয়নের জন্য জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাঠে রেডক্রিসেন্ট বর্তমানে কাজ করছে। তালিকা প্রণয়ন শেষে তাদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হবে। বৃষ্টি না হলে পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত সরে যাবে বলে আশা করা যায়।
শেরপুর টাইমস/ বা.স