ভারত থেকে আসা পাহাড়ি হাতির তাণ্ডবে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। হাতির পায়ের তলায় পিষ্ট হচ্ছে জমির ফসল, লণ্ডভণ্ড হচ্ছে বাড়িঘর। ঘটছে প্রাণহানিও।
কৃষি বিভাগের হিসাবে, গত এক সপ্তাহে উপজেলার প্রায় ৪০ একর জমির ফসল হাতির তাণ্ডবে নষ্ট হয়েছে।
এ উপজেলায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের আড়াই কিলোমিটার অংশে কাঁটা তারের কোনো বেড়া নেই। এসব অংশ দিয়ে ভারতের সীমানা পেরিয়ে বন্য হাতি খাবারের সন্ধানে অবাধে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। তাণ্ডব চালিয়ে আবার ফিরে যাচ্ছে নিজ এলাকায়।
সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় প্রশাসনের অভিযোগ, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ নিজ এলাকার ফসল রক্ষায় সীমান্তের গেট খুলে হাতির পালকে বাংলাদেশে প্রবেশে সহায়তা করে।
ভারত থেকে আসা হাতির তাণ্ডবে বিপর্যস্ত কৃষক
হাতির পাল সবচেয়ে বেশি তাণ্ডব চালায় হালুয়াঘাটের ভুবনকুড়া ইউনিয়নের বানাই চিরিঙ্গাপাড়া, ধোপাঝুড়ি, জখমকুড়া, কোচপাড়া, রঙ্গমপাড়া ও কড়ইতলী এলাকায়। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নিয়মিতই তাণ্ডব চলে।
টর্চলাইট, মশাল জ্বালিয়ে, বাঁশি বাজিয়ে, পটকা ফুটিয়ে ও লাঠি হাতে রাত জেগে পাহারা দেয় সেখানকার মানুষ। তবুও থামানো যায় না এই হাতিদের।
উপজেলার ভুবনকুড়া ইউনিয়নের বানাই চিরিঙ্গীপাড়া এলাকার কৃষক চান মিয়া বলেন, ‘দিনমজুরের কাজ করে কোনোরকম সংসার চালাই। ৩০ শতক জমিতে আমন ধান ছিল। এর মধ্যে ১০ শতক জমির চারা চোখের সামনে তছনছ করে দিয়েছে হাতির পাল।
‘সারা রাত পাহারা দিয়েও হাতি ফেরাতে পারিনি। হাতির সঙ্গে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর যুদ্ধ করতে চাই না। এখন আমরা ক্লান্ত।’
একই এলাকার কৃষক ইব্রাহিম মিয়া বলেন, ‘অর্ধলাখ টাকা দেনা করে ৩০০ শতক জমিতে আমন ধান চাষ করেছি। সম্প্রতি ভারত থেকে আসা হাতির পাল রাতে এসে পা দিয়ে পিষ্ট করেছে ধানগাছ। সারা বছর খাব কী? দেনা পরিশোধ করব ক্যামনে? আমি সরকারি সহায়তা চাই।’
ভারত থেকে আসা হাতির তাণ্ডবে বিপর্যস্ত কৃষক
কড়ইতলি এলাকার কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সীমান্তে হাতির সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ দীর্ঘদিনের। তবে বিগত কয়েক বছর হাতির আক্রমণ কিছুটা কমলেও এক বছর ধরে হাতির তাণ্ডব মাত্রাতিরিক্ত। সব ধরনের ফসল খেয়ে সাবাড় করার পাশাপাশি পা দিয়ে সব তছনছ করে দিচ্ছে। এরপর বাড়িঘরে হামলা করছে।
‘হাতি তাড়ানোর মতো আধুনিক যন্ত্রপাতিও নেই। আমরা এখন অসহায় অবস্থায় জীবন যাপন করছি।’
উপজেলার ভূবনকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুরুজ মিয়া জানান, হাতি তাড়াতে ইউনিয়ন পরিষদের তহবিল থেকে কৃষকদের কেরোসিন, টর্চলাইট ও পটকা সরবরাহ করে সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না, হাতি দল বেঁধে হানা দিয়েই যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান জানান, হাতির তাণ্ডবে গত এক সপ্তাহে ৪০ একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। আরও অনেক কৃষকের ক্ষতির হিসাব চলছে।
ভারত থেকে আসা হাতির তাণ্ডবে বিপর্যস্ত কৃষক হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজাউল করিম বলেন, ‘ভারতীয় সীমান্তের প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নেই। এসব অংশ দিয়ে হাতি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এ ছাড়া হালুয়াঘাটে ভারতের সীমান্তের ভেতর হাতি আক্রমণের সময় বিএসএফ গেট খুলে দেয়। তখন দল বেঁধে হাতিগুলো অবাধে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
‘গত এক বছরে ভারত থেকে আসা হাতির আক্রমণে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এর আগেও এমন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। মূলত খাবার খেতেই হাতিগুলো আসে। এ সময়ই তাণ্ডব চালায়। হাতি শান্ত হলে বিএসএফ গেট খুলে দেয়, সেগুলো আবার ভারতে ফিরে যায়।’
ইউএনও আরও বলেন, অবস্থা উত্তরণে স্থানীয় যুবকদের নিয়ে হাতি প্রতিরোধ টিম গঠন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে সরকারিভাবে সহযোগিতার চেষ্টা চলছে। বিষয়টি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং বন বিভাগকেও অবহিত করা হয়েছে।