মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় টিলা এবং হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া পাহাড় কাটা রোধে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে জানতে চান আদালত।
একই সঙ্গে পাহাড় কাটা রোধে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকের উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেন, আপনাদেরও দায়িত্ব ছিল। আপনারা কী করেছেন? এসব মামলা হচ্ছে দেশের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটা পাহাড় কেটে নিয়ে চলে গেলো, আর এখানে (পিআইএল) জনস্বার্থে মামলা করতে হবে কেন? আপনারা কী ব্যবস্থা নিয়েছন? আদালতের আদেশ দিতে হবে কেন?
মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মোহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন প্রশ্ন তোলেন। এরপর এ বিষয়ে অগ্রগতি ও পরবর্তী শুনানির জন্যে আগামী ১২ নভেম্বর দিন ঠিক করেন হাইকোর্ট। ওইদিন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) এবং সিলেট জেলা অধিদপ্তরের পরিচালককেও উপস্থিত থাকতে হবে।
আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ।
শুনানিতে আদালত বলেন, প্রথমে আমরা রুল দেই। তার পরে আরও শুনানি হয়। আদেশ দেওয়া হয়। পিআইএল অর্ডার হলো ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি, সেখানে বলা হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরকে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ সুপার (এসপি) সহায়তা করবেন। সেখানে পাহাড় কাটার ঘটনা ঘটেছে কি না তদন্ত করে সত্যতা আছে কি না তথ্য সংগ্রহ করে আপনারা ব্যবস্থা নেবেন। পরিবেশ আইনের ধারা অনুযায়ী আপনাদের ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার দেওয়া আছে, তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করার।
আদালত বলেন, চলতি বছর অর্ডার কলাম, দেখলাম যে কোনো সাড়া নেই। সেই থেকে আমরা গত আগস্ট মাসে এসে জানলাম আপনারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। এর পর বললাম, জবাব দেন। আপনারা কেন করলেন না? দুই বছর হয়েছে, আমাদেরকে জানাতেই পারলেন না যে আপনারা যতই ব্যবস্থা নিন।
এ সময় আদালতে উপস্থিত পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকার পরিচালক জানান, আমি ঢাকা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক, সেখানে আমাদের একজন পরিচালক আছেন। সিলেট অঞ্চল যিনি দেখেন তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আর আদালতে আসতে হবে আদেশটি তার জানা ছিল না।
পরে আদালত বলেন, কিন্তু রিট পিটিশনের রুলের টার্মস আছে এটা শিউর হলেন কীভাবে? জবাবে পরিচালক বলেন, ২০২১ সালের ৪ জানুয়ারি মাসে তদন্ত করা হয়েছিল। তদন্ত করে পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট অফিস। সেখানে ২৬ হাজার ২৪০ বর্গফুট পাহাড় ও টিলার মাটি কাটা হয়েছে বলে জানা যায়। সেটার ওপর নির্ভর করে ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি সভা হয় এবং দায়ী ব্যক্তিদের ডাকা হয়। তাদের ১৩ লাখ ১২ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় পূর্বক পরবর্তী সাত কার্যদিবসের মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বলা হয। একই সঙ্গে বলা হয়, (ওই বছরের) আগামী এক মাসের মধ্যে পাহাড়ের মাটি ভরাট করে গাছ লাগিয়ে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে।
পরবর্তীতে কী হলো আদালত জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, আপিল করেছেন তারা। এ পর্যায়ে আপিল তো করলো, বাট যেহেতু এটা সেনসিটিভ ব্যাপার, পাহাড় কেটে ফেললো। এটাতো ভেরি ফাস্টেজ পসিবলটা বিশেষ করে আপনাদেরকে নিতে হবে। পরের চ্যাপ্টার পরে, আপনাদের ওপর যেন কেউ কোনো কথা বলতে না পারে যেহেতু বিষয়টি সেনসিটিভ।
এ সময় আদালত প্রশ্ন তোলেন, ওনারা জানেন না কেন? তখন এর জবাবে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, দেশের প্রায় সব পত্রপত্রিকায় এসেছে, ওনারা জানেন না এটা কোনো কথা হলো। এরপর আদালত প্রথমে বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার ৯ নভেম্বর প্রতিবেদন জমা দবেন। তখন পরিবেশ অধিদপ্তরের আইনজীবী সময় আবেদন করেন। এরপর আগামী ১২ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ঠিক করেন। ওইদিন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) এবং সিলেট জেলা অধিদপ্তরের পরিচালকেও উপস্থিত থাকতে হবে।
হাইকোর্ট বলেন, আমরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এর আগে আগস্ট মাসে আদেশ দেওয়া হলো, আপনারা কী ব্যবস্থা নিয়েছেন?
এর আগে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় টিলা এবং হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের দিনারপুরে পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে চার সপ্তাহের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
এক আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের বিধান অনুসারে ব্যবস্থা নিতে এ আদেশ দেন।
মৌলভীবাজারের পাহাড় কাটা বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। এর সূত্র ধরে সম্পূরক আবেদন করে এইচআরপিবি। আদালতে ওই আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী রিপন বাড়ৈ। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আমাতুল করীম।
পরে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া চা-বাগানের ভেতরে রাস্তা নির্মাণে টিলা কাটা ও হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের দিনারপুরে পাহাড় কাটা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে আবেদনটি করা হয়। ওখানে পাহাড় ও টিলা কাটায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ১৫ ধারা অনুসারে ব্যবস্থা নিতে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদেশ বাস্তবায়ন বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতেও বলা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সেটি শুনানিতে ওঠে।