‘কি আর করমু, মনে করেন আমগুর গেন্দির বাপ (মেয়ের বাবা) নাপিতের কাম করত। এহন চোহে (চোখে) দেহে না। তাই কামাই রোজকার করবার পায় না। এর নাইগ্যে এহন কষ্ট হইলেও দোহানো দোহানো পানি বেইচ্চ্যা যে ট্যাহা পাই, ওতেই চাইল-ডাইল (চাউল-ডাউল) কিনে কোন রহম সংসার চালাই।
রবিবার দুপুরে এ প্রতিবেদককে অনেক আক্ষেপের সাথে কথাগুলো বলছিলেন আসিয়া বেগম (৪০)। তিনি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার বন্দভাটপাড়া গ্রামের আব্দুল করিমের স্ত্রী। করিম নাপিত ছিলেন। কিন্তু চোখে না দেখা ও শরীরে রোগের বাসা বাঁধাই কাজ ছেড়ে দিয়েছেন অনেক আগেই। এখন তার স্ত্রী আসিয়া শীতে কেঁপে, বর্ষার সময় বৃষ্টিতে ভিজে, আবার প্রচ- রোদ উপেক্ষা করে অত্যন্ত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিয়েই বাজারে চায়ের দোকানগুলোতে পানি বিক্রি করে সংসার চালান।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রচ- রোদ ছিল আকাশে। আর সেই রোদের তাপে আসিয়ার শরীর ঘেমে পানি পড়ছিল। আর নিজে প্লাস্টিকের ড্রাম ও কলসি বোঝায় সিটবিহীন প্রায় অকোজো ভ্যানগাড়ি টেনে নিয়ে যাচ্ছেন আসিয়া। আর ওই ভ্যান ঠেলছেন তার স্বামী করিম। কিছু দূর যেতেই সামনের এক চায়ের দোকানে থামে তারা। পরে ড্রাম থেকে কলসিতে পানি ভরে ফের দোকানের ড্রামে ঢালে। এভাবেই প্রত্যেক চায়ের দোকানে প্রতি কলস পানি ৫টাকা মূল্যে বিক্রি করেন তিনি।
আসিয়া বেগম জানান, জমি-জমা বলতে ৫শতাংশের একটি বাড়ি ভিটে মাত্র তাদের। ফসলি কোন জমি নেই। সংসারে একটি মেয়ে ছিল, তাকেও অনেই আগেই বিয়ে দিয়েছেন। সংসার চালানোর তাগিদে বাজারের গরুহাটি মসজিদের সাম্বাসিবল থেকে পানি নেন তিনি। এতে মসজিদের তহবিলে তাকে মাসে ৩হাজার টাকা দিতে হয় আসিয়াকে। আর ওই পানি চায়ের দোকানে দোকানে বিক্রি করে প্রতিদিন ৩০০-৩৫০ টাকা আয় হয় তার। ওই টাকা দিয়েই সংসার চলে তাদের। আসিয়ার সতীনের সংসারও আছে বলেও জানান তিনি।
আসিয়ার স্বামী করিম বলেন, কি আর করমু কামাই করবার পাই না। ভ্যান গাড়িটাও ভালা না। খুব শক্তি লাগে ঠেলে নিয়ে যেতে। মেম্বার-চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে ভিজিএফ, ভিজিডিসহ কোন সুবিধা পায় না তারা। এমতাবস্থায় সরকার এবং সবার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোফাজ্জল হোসেন চাঁন বলেন, সামনে বরাদ্দ পেলে তাদের জন্য একটা ব্যবস্থা করে দিবেন।