পরিবেশ নিয়ে ভাবনা
– মোহাম্মদ শুয়াইবুর রহমান
একুশ শতকে এসে আমরা সবাই নিজেদের সচেতন মানুষ হিসেবে দাবী করি। কিন্তু আমরা কতটুকু সচেতন প্রকৃতপক্ষে এই প্রশ্ন যদি নিজের বিবেককে নিজে করি তবেই সঠিক উত্তরটি পেয়ে যাব। আমরা সবাই নিজেদেরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দাবি করি। কিন্তু আমরা কি আসলেই পরিচ্ছন্ন? আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রতিনিয়ত আমাদের চারপাশের পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন রাখছি। এমনকি নিজেকে এবং নিজেকে ঘিরে যে বিষয়গুলো রয়েছে সেগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখছি না। এভাবে ব্যক্তি থেকে সমাজ; সমাজ থেকে রাষ্ট্র সবকিছুই অপরিচ্ছন্ন হচ্ছে।
আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের কাজের মাধ্যমে পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান যেমন: মাটি; পানি; বায়ু দূষণ করেই চলেছি।এভাবে চলতে থাকলে আমাদের এই সুন্দর পৃথিবী এক সময় আর বাসোপযোগী থাকবে না। এই পরিবেশ দূষণের ফলে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু তাদের বংশ বিস্তারের উপযুক্ত পরিবেশ পাচ্ছে। ফলে তারা প্রতিনিয়ত বংশবিস্তার করেই চলেছে এবং আমাদের রোগাক্রান্ত করছে। এই রোগ কিন্তু শুধুমাত্র একজনের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। বরং ছড়িয়ে পড়ছে সবার মাঝে। যেমন: বর্তমানে জাতীয় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু। এটিও কিন্তু আমাদের অপরিচ্ছন্ন রাখার এবং অসচেতনতারই ফসল।
যদি আমরা আমাদের চারপাশে পরিষ্কার পানি জমতে না দেই তবে এই সমস্যাও আর বিস্তার লাভ করবে না। এভাবে আমরা পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতার নিয়মগুলো মেনে চলার মাধ্যমে ক্ষুদ্র রোগগুলোকে মহামারী আকার ধারণ থেকে রোধ করতে পারি। অর্থাৎ আমাদের সামান্য পরিচ্ছন্ন থাকাতেই রক্ষা পেতে পারে অসংখ্য জীবন। যদি আমরা তা না করি তবে প্রতিনিয়ত ডেঙ্গুর মতো এই সমস্যাগুলো মহামারী আকার ধারণ করবে এবং দেশ হারাবে তার কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে। তাই নিজে সচেতন থাকুন; পরিচ্ছন্ন থাকুন এবং নিজের ও প্রিয়জনদের জীবন বাঁচান। প্রত্যেকে নিজে নিজে সচেতন হওয়ার মাধ্যমেই সচেতন হতে পারে গোটা পৃথিবী।
এছাড়া আমাদের পরিবেশে আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। যা ঘটছে মূলত বায়ু দূষণের কারণে। বায়ু দূষণের ফলে পরিবেশে গ্রীন হাউজ গ্যাস গুলোর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবং এর ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। যা বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় হুমকি। তাই সকলে মিলে বায়ুদূষণ থেকে দূরে থাকুন। একটি ছোট্ট পদক্ষেপ থেকেই শুরু করতে হবে। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন আমি সামান্য বায়ুদূষণ করি; দু একটা গাছ কাটি। এতে কি এমন ক্ষতি হবে? কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীতে 700 কোটির উপরে মানুষ রয়েছে।
সবাই যদি বছরে একটি করে গাছ কাটে তবুও পৃথিবীর বন-জঙ্গল ধ্বংস হয়ে যাবে। পৃথিবীতে আর গাছের অস্তিত্ব থাকবে না। তাই গাছ কাটতে হলে গাছ লাগানোর মানসিকতাও থাকতে হবে।আপনার কাটা একটি গাছও অনেক বড় কিছু। তাই অপ্রয়োজনে গাছ কাটবো না; অযথা পরিবেশ দূষণ করবো না। ভুটানের মোট আয়তনের 70 ভাগই বন। এবং দেশটি কার্বন নেতিবাচক। তবুও তারা তাদের দেশের বনায়ন পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। বরং তারা প্রতিনিয়ত উদ্যোগ নিচ্ছে কিভাবে তাদের বনভূমির পরিমাণ আরো বাড়ানো যায়। আর আমরা কি করছি?
সরকারি হিসাব মতে আমাদের দেশে মোট আয়তনের 17 ভাগ বনভূমি রয়েছে; যা 25 ভাগ থাকা প্রয়োজন। তবুও আমরা প্রতিনিয়ত গাছ কেটে চলেছি। তাই ব্যক্তি থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে। বিশ্বের কোন দেশে বনভূমি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বা কোথায় বৃক্ষ কেটে নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে তা নিয়ে না ভেবে নিজের চারপাশের পরিবেশ নিয়ে ভাবুন।
আগে নিজের বাড়ি; তারপর আশেপাশে সমাজ; তারপর রাষ্ট্রের সকল সমস্যা নিয়ে ভাবুন; সমাধানের উদ্যোগ নিন। তারপর গোটা বিশ্ব নিয়ে ভাববেন। সচেতনতাই সকল সামাজিক সমস্যার সমাধান।
লেখক : মোহাম্মদ শুয়াইবুর রহমান,
শিক্ষার্থী ও শিশু সাংবাদিক,
বিতার্কিক, নবারুণ ডিবেটিং ক্লাব।
শেরপুর টাইমস ডট কম-এর মতামত পাতায় প্রকাশিত লেখার দায়ভার লেখকের নিজের। এর দায় শেরপুর টাইমস কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করবে না। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে শেরপুর টাইমসের মতামত পাতায় আপনিও আপনার মতামত জানাতে পারেন sherpurtimesdesk@gmail.com এই মেইলে।