পবিত্র কোরআন মানবজাতির সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ ও মুক্তির দিশারি বা পথপ্রদর্শক। কোরআনকে সর্বকালের, সর্বদেশের, সর্বলোকের জীবনবিধান ও মুক্তির সনদ হিসেবে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা অবতীর্ণ করেন।
এটি বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) এর প্রতি ফেরেশতা হজরত জিবরাইল (আ.) এর মারফত সুদীর্ঘ ২৩ বছরে নাজিল হয়।
শুধু তাই নয়, এ কোরআন সংরক্ষণের দায়িত্বও গ্রহণ করেছেন স্বয়ং আল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
‘আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতরণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।’ (সূরা: আল-হিজর, আয়াত: ৯)
পাশাপাশি দুনিয়ায় যারা এ কোরআনের হেফাজত, তেলাওয়াত ও বিধান মেনে চলবে তাদের জন্যও রয়েছে অসংখ্য উপকারিতা ও ফজিলতের ঘোষণা। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
‘অবশ্যই তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আলো ও সুস্পষ্ট কিতাব এসেছে। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, এ (জ্যোতির্ময় কোরআন) দ্বারা তিনি তাদেরকে শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং নিজ অনুমতিক্রমে তাদেরকে (কুফরিরে) অন্ধকার থেকে বের করে (ঈমানের) আলোর দিকে নিয়ে যান এবং তাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন।’ (সূরা: মায়িদা, আয়াত ১৫-১৬)
অথচ মানুষ পবিত্র কোরআনুল কারিমের বিধান পালন, নসিহত গ্রহণ ও তেলাওয়াত করা থেকে দূরে সরে গিয়ে নিজেদের ক্ষতি ডেকে আনছে। বঞ্চিত হচ্ছে কোরআন-সুন্নায় ঘোষিত ফজিলত উপকারিতা থেকে।
কোরআন থেকে দূরে সরে যাওয়া কোনো মুমিন মুসলমানেরই উচিত নয়। কেননা এ কোরআনের তেলাওয়াতই মানুষকে উত্তম জীবনযাপনের দিকে ধাবিত করে। পরকালের সীমাহীন নেয়ামত লাভে উদ্বুদ্ধ করে।
তাছাড়া নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াতে রয়েছে মানুষের জন্য অনেক বড় উপকারিততা। আল্লাহ তায়ালাই মানুষকে তারতিলের সঙ্গে কোরআন তেলাওয়াতের নির্দেশ দিয়েছেন। তাইতো কোরআনের তেলাওয়াত ও ফজিলেতের বর্ণনা এসেছে কোরআনে এবং প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র জবানিতে। আর তাহলো-
> মানবজাতির মুক্তির ঠিকানা কোরআন
সূরা আন-নাহলের ৮৯ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন,
‘আমি তোমার প্রতি প্রত্যেক বিষয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যাস্বরূপ কিতাব (কোরআন) প্রেরণ করেছি এবং আত্মসমর্পনকারীদের (মুসলিমদের) জন্য (কোরআন) পথপ্রদর্শক, করুনা ও সুসংবাদস্বরূপ।’
> ঈমান বৃদ্ধিতে কোরআন
কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে মানুষের ঈমান বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। আর যখনই মানুষের ঈমান বেড়ে যায়, তখনই মানুষ দুনিয়া ও পরকালের জন্য নিজেকে সাজাতে সহজ হয়। আল্লাহ বলেন,
‘মুমিন তো তারা, আল্লাহকে স্মরণ করার সময় যখন তাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে। আর যখন তাদের ওপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের উপরই ভরসা করে।’ (সূরা: আনফাল, আয়াত: ২)
> প্রশান্তি লাভে কোরআন
জীবনের উন্নতি-অবনতি, আল্লাহর দান কম-বেশি সর্বাবস্থায় কোরআন মানুষের অন্তরে তৃপ্তি ও প্রশান্তি ঢেলে দেয়। কোরআনের বরকতেই সব অশান্তি থেকে প্রশান্তি লাভ করে। আল্লাহ ঘোষণা দেন,
‘যারা ঈমান আনে, বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে। জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।’ (সূরা: আর-রাদ, আয়াত: ২৮)
> সর্বোচ্চ জ্ঞানের উৎস কোরআন
পবিত্র কোরআনুল কারিমের মানুষের সব জ্ঞানের উৎস। কোরআন গবেষণা করেই মানুষ দিন দিন নতুন আবিষ্কার নিয়ে আসছে। বিশ্বজগত সম্পর্কে ধারণা লাভ করছে। মানুষকে গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতেই আল্লাহ ঘোষণা করেন,
‘ইয়া-সীন। জ্ঞানগর্ব (বিজ্ঞানময়) কোরআনের শপথ। নিশ্চয়ই আপনি প্রেরিত রাসূলদের অন্তর্ভূক্ত। সরল (সঠিক) পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত। কোরআন পরাক্রমশালী ও পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত।’ (সূরা: ইয়াসিন, আয়াত: ১-৫)
> কোরআন সুপারিশকারী
পরকালের ভয়াবহ দিন এ কোরআনই তার তেলাওয়াতকারী, বিধান পালনকারী ও নসিহত গ্রহণকারীর জন্য মুক্তি লাভে সুপারিশ করবে। হাদিসে এসেছে,
হজরত আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কোরআন তেলাওয়াত কর। কারণ কোরআন কেয়ামতের দিন তেলাওয়াতকারীর (নাজাতের) জন্য সুপারিশ করবে।’ (মুসলিম)
> জান্নাত লাভেও সুপারিশ করবে কোরআন
কেয়ামতের দিনে কোরআন আল্লাহর কাছে তেলাওয়াতকারীর জন্য এভাবে সুপারিশ করবে,
‘হে আমার প্রভু! আমার তেলাওয়াতই তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছে। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতঃপর আল্লাহ তায়ালা কোরআনের সুপারিশ কবুল করবেন।’ (মুসনাদে আহমদ)
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে কোরআনের ঘোষিত ফজিলত ও উপকারিতাগুলো লাভ করতে কোরআনের তেলাওয়াত, বিধান পালন ও নসিহত গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।