
স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের যেমন চ্যালেঞ্জ ছিল ঠিক তেমনি চ্যালেঞ্জিং জীবন গড়ে এগিয়ে যাচ্ছে ছালমা খাতুনের স্বপ্ন। পদ্মা সেতু তৈরিতে বিশ্বব্যাংক বা দাতা গোষ্ঠী অর্থ জোগান দিতে অস্বীকৃতি জানালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন এবং নিজ দেশের অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুতে থাকছে সড়ক পথসহ ট্রেন পথের মিটারগেজ ও ব্রডগেজ লাইন। যা এখন পদ্মা নদীর ওপরে দৃশ্যমান। সারা দেশের মানুষ রাজধানীর সাথে সহজতর যোগাযোগের স্বপ্ন দেখতে শুরু করছেন। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কবে নাগাদ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে এই স্বপ্নের সেতুটি। কখন পার হতে পারবেন স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে।
এ দিকে বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র নারী ট্রেন চালক ছালমা স্বপ্ন দেখছেন পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে উদ্বোধনী ট্রেন চালানোর। ৬.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুতে থাকছে সড়ক পথসহ ট্রেনের মিটারগেজ ও ব্রডগেজ লাইন। তার বিশ্বাস একজন নারী প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন এবং সেতুতে ট্রেন উদ্বোধনও তিনিই করবেন। ছালমার প্রত্যাশা উদ্বোধনী ট্রেনটি তিনিই চালাবেন। এজন্য তিনি নিজেকে তৈরীও করছেন।
২০০৪ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী ট্রেন চালক হিসেবে যোগদান করেন। স্কুল জীবন থেকেই ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার নয় ব্যতিক্রম কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন ছালমা। সেই ব্যতিক্রম স্বপ্নই তাকে বাংলাদেশের প্রথম নারী ট্রেনচালক হিসেবে স্বীকৃতি এনে দেয়। ছালমা নতুন স্বপ্নে বিভোর এখন। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ট্রেন চালানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তিনি। কবে নাগাদ আসবে সেই শুভ দিনটি।
ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ছালমা বলেন, চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পছন্দ করি কিন্তু ট্রেন চালানোর মতো এত বড় চ্যালেঞ্জ হবে বুঝতে পারিনি। এর মধ্যে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিজের বিবেক ও মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকা। যখন দেখি জীবন্ত একজন মানুষ আনমনা হয়ে রেলপথ দিয়ে হাঁটছে বা দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলছে অথচ ট্রেনের হর্ণ শুনছে না। নিজ চোখের সামনে জীবন্ত মানুষের মৃত্যু দেখে আতঙ্কিত হই, কষ্ট পাই। নিজের মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করি। আরও একটি বিপদের কথা শুনালেন ছালমা। তিনি বলেন, চলন্ত ট্রেনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কিংবা অন্য ট্রেন থেকে যখন পাথর ছুঁড়ে মারে তখন এভাবে তিন বার পাথরের ঢিল থেকে প্রাণে বেঁচে গেছি। তিনি চালকের আসনটিকে আরও নিরাপদ করার কথা বলেন।
ব্যক্তি জীবনে ছালমা বিবাহিতা। স্বামী হাফিজ উদ্দিন জজ কোর্টে চাকুরী করেন। আদিবা ইবনাত লাবণ্য ও জাবিয়া ইবতিজা নামে দুই কন্যা সন্তানের জননী। ছালমার শখের কাজ আড্ডা ও ভ্রমণ করা। ট্রেন চালনায় সহকর্মীদের সহযোগিতা এবং সাধারণ মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। কেউ কেউ আশ্চর্য আবার কেউ কেউ অর্ভিভূত হয়েছেন তাকে দেখে।
এ চাকুরিটি পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করেছেন ছালমা। সেই সঙ্গে পদ্মা সেতুর প্রথম ট্রেনটি চালানোর স্বপ্ন ঝলমল করছে তার দু’চোখে। কবে আসবে সেই শুভ দিনটি, স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হবে আর তার ওপর দিয়ে ট্রেন চালাবেন দেশের প্রথম একমাত্র নারী ট্রেন চালক ছালমা খাতুন।