ছোট বেলায় সিঁড়ি থেকে পড়ে দুই পায়ে চলার শক্তি হারায় ইয়ামিনা বিনতে মাহমুদ। কিন্তু প্রতিবন্ধকতা থামিয়ে রাখতে পারেনি তাকে। হুইলচেয়ারে ভর করেই নিজের প্রতিভা বিকাশ করেছে সে। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় পেয়েছে জিপিএ-৫।
জানা যায়, ইয়ামিনা ঝালকাঠি সদর উপজেলার নথুল্লাবাদ ইউনিয়নের দিবাকরকাঠি গ্রামের প্রকৌশলী মাহামুদ হাসান সেলিমের মেয়ে। মাহামুদ হাসান চাকরির সুবাদে পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করছেন। রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।
ইয়ামিনার বাবা মাহামুদ হাসান সেলিম বলেন, জন্মের পর থেকেই চঞ্চলতার কারণে ওর মেধার বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। প্রথম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বাসার তিনতলা সিঁড়ি থেকে পড়ে সে চলনশক্তি হারায়। কিন্তু তার পড়াশোনার আগ্রহ আমকে মুগ্ধ করে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করে। কিন্তু মাধ্যমিকে ভর্তি করতে গিয়েই বাধে বিপত্তি। তার পঙ্গুত্বের কারণে কেউ ভর্তির সুযোগ দিতে চায়নি। তবে মেয়ের পড়াশোনার প্রতিভা দেখে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ এম সি নুর রহমান তাকে পড়ার সুযোগ করে দেন।
মাইলস্টোন কলেজের অধ্যক্ষ এম সি নূর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, অত্যন্ত মেধাবী ইয়ামিনা হুইলচেয়ারে করেই কলেজে যাতায়াত করেছে। তার মা-বাবা তাকে আনানেওয়া করতেন। মেয়েটির পড়াশোনার প্রতি সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দেখিয়েছি আমরা। বাড়তি কেয়ার নিয়েছি। ওর ভেতরে কোনো প্রতিবন্ধকতা দেখিনি। আমাদের বিশ্বাস ছিল ভালো কিছু করবে। তাকে কলেজের সবাই সহযোগিতা করেছে। জিপিএ-৫ পাওয়ার সংগ্রামে সফল হয়েছে ইয়ামিনা।
ইয়ামিনা বিনতে মাহমুদ জানায়, লেখাপড়াই আমার সবকিছু। পড়াশোনা করতে না পারলে আমার খুব খারাপ লাগে। আমরাও ইচ্ছে হয় অন্য সব সহপাঠীর মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে। কিন্তু সেটা সম্ভব না। এরজন্য খারাপ লাগে মাঝে মধ্যে। জিপিএ-৫ পাওয়ায় আমার সব কষ্ট দূর হয়ে গেছে। আমার ইচ্ছে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের মাধ্যমে জনগণের সেবা করার।
ইয়ামিনার মা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ইয়ামিনা এসএসসি পাস করলেও তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। এখন মেয়েকে কলেজে ভর্তি করতে হবে। কিন্তু অসুস্থ দেখে কোনো কলেজে সুযোগ পাবে কি না তাই নিয়ে চিন্তায় আমার ঘুম আসে না।
তিনি আরও বলেন, যদি ভালো কলেজে ভর্তির সুযোগ পাই আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমার অসহায় মেয়েটির দিকে দৃষ্টি দেন, তাহলে সে দেশের বোঝা নয়, সম্পদ হতে পারে।