যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহনের পর মাত্র নয় টাকা পুঁজি নিয়ে শেকড় থেকে শেখরে পৌঁছেছেন শ্রীবরদীর সফল আত্নকর্মী হেলাল উদ্দিন। তার এখন স্বপ্ন পুরণ হয়েছে। মেলেছে স্বপ্নের ডানা । নয় টাকার পুঁজি এখন প্রায় কোটি টাকায় পরিণত হয়েছে।
আত্নপ্রত্যয়ী হেলাল উদ্দিন কঠোর পরিশ্রম করে গত যুব দিবসে ময়মনসিংহ বিভাগে সফল আত্নকর্মীর পরিচিতি অর্জণ করে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তাকে দিয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। এখন তার নাম ডাক চারিদিকে ছড়িয়ে পরেছে।
হেলাল উদ্দিন অতি দরিদ্র ঘরের সন্তান। শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী রানিশিমুল ইউনিয়নের টেংগরপাড়া গ্রামের সহায় সম্বলহীন মরহুম আব্দুর রহমানের ৪ সন্তানের মধ্যে হেলাল উদ্দিন ২য় সন্তান। হরহামেশায় তার পরিবারে অভাব অনটন লেগেই থাকতো। ১৯৯৪ সালে এস.এস.সি পরীক্ষায় ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও মেধাবী হেলাল উদ্দিনের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হয় নাই দারিদ্রতার কষাঘাতে।
অভাবের তাড়নায় উপার্জনের আশায় প্রাইভেট টিউশনি শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু এতে করেও সংসারের অভাব অনটন কিছুতেই মোচন হচ্ছিল না। জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়ার পাত্র নয় এই মেধাবী ছেলেটি। মনের ভিতর কি যেন সহসাই গুমরে গুমরে উঠতো। নতুন কিছু করে সংসারের অভাবকে জয় করার বাসনা তাকে প্রতি নিয়ত কুঁড়ে কঁড়ে খেত। হঠাৎ জানতে পারলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হওয়া যায়।
এ সংবাদের পর উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসে গিয়ে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার সাথে আলাপ আলোচনা করে বিস্তারিতভাবে অবগত হন। যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার কথায় তিনি উদ্বুদ্ধ হন। ২০০৩ সালে ৩ মাস মেয়াদী গবাদীপশু হাঁস-মুরগী পালন, প্রাথমিক চিকিৎসা, মৎস চাষ এবং কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ কোর্সে ভর্তি হন। প্রশিক্ষণ কালীন সময়, এ যেন কঠিন যুদ্ধ। এসময় পরিবারের লোকজন খুব কষ্ট করে দিনাতিপাত করতেন। হেলাল উদ্দিনের মমতাময়ী মা অনাহারে অর্ধাহারে থেকে ভাতের চাল বিক্রি করে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যাওয়া আসা ও ছেলের সকালের খাবারের খরচ যোগাতো। প্রশিক্ষণ চলাকালিন সময়ে তিনি পশু চিকিৎসার দিকে বেশি নজর দিতেন। প্রশিক্ষণ শেষে মাত্র ৯ টাকা পুঁজি নিয়ে পশু চিকিৎসা শুরু করেন।
পরে আত্নীয়দের সহযোগিতায় পশু চিকিৎসা ও ছোট আকারের মুরগীর খামার প্রকল্প দাঁড় করান। পরে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ধারাবাহিক ভাবে বিভিন্ন অংকের ঋণ গ্রহন করে পর্যায়ক্রমে বড় আকারের মুরগীর খামার প্রতিষ্ঠা করেন। খামারের উপার্জিত অর্থ থেকে ঋণ পরিশোধ করেন।
তার খামারে বর্তমানে ৩ জন কর্মরত রয়েছে। এখান থেকে তাদেরও সংসার চলে স্বচ্ছল ভাবে। খামারের বর্জ থেকে বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করেছেন। এ গ্যাস থেকে নিজের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত গ্যাস ভাড়া দিয়ে বাড়তি উপার্জন করছেন। বর্তমানে তিনি প্রায় কোটি টাকার মূলধন করেছেন।
হেলাল উদ্দিনের সফলতায় উদ্ভুত হয়ে এলাকার অনেক যুবক যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছে। হেলাল উদ্দিন ময়মনসিংহ বিভাগে সফল আত্নকর্মী হিসাবে পরিচিতি অর্জণ করায় গত জাতীয় যুবদিবসে মহামান্য রাষ্ট্রপতি এ্যাড. আব্দুল হামিদ তার হাতে ক্রেস্ট ও ৪০ হাজার টাকার চেক তুলে দিয়েছেন।