ছবি : ফোকাস বাংলা
বাংলা ট্রিবিউন : মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতার পর আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ছয় লাখ ১৮ হাজারেও বেশি রোহিঙ্গা। তাদের বেশিরভাগই সহায় সম্বলহীন ও হতদরিদ্র শ্রেণির। তবে বিত্তশালী ও বড় ব্যবসায়ীর সংখ্যাও একেবারেই কম নয়। তারা পালিয়ে আসার সময় কিছু অর্থকড়িও সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। তবে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিত্তশালী রোহিঙ্গারা ব্যবসায় ও যাতায়াতের সূত্র ধরে অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে তাদের অর্থসম্পদ গচ্ছিত রাখছেন। এক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করছেন পরিচিত বাংলাদেশিরা। একইভাবে দেশে বিশ্বস্ত মগদের সাহায্য নিয়ে মংডুর বিভিন্ন ব্যাংকেও অর্থ সঞ্চয় করছে তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দ্বারা নির্যাতিত হয়ে যত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তারা সীমান্তেই বা এর আশেপাশেই হুন্ডি ব্যবসায়ীদের সহায়তায় মিয়ানমার থেকে আনা কিয়াতকে বাংলাদেশি টাকায় পরিবর্তিত করেও নিয়েছে। তবে বিত্তশালী রোহিঙ্গা ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে এভাবে আনা নগদ অর্থের পরিমাণ তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। তবে তারা খালি হাতেও আসেননি। সম্পদ রাখার ক্ষেত্রে মিয়ানমার সরকারের বাধ্যবাধকতা থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই তারা সঙ্গোপনে নিজেদের সম্পদ লুকিয়ে ফেলছেন। শত বছর ধরেই বাংলাদেশিদের সঙ্গে তাদের ব্যবসায়িক লেনদেন থাকায় বিশ্বস্ত বাংলাদেশিদের সহায়তায় বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে তারা তাদের অর্থ সম্পদ গচ্ছিত রাখছেন। একইভাবে অর্থসম্পদ রক্ষায় তারা দেশে মগদের সহায়তা নিয়ে মংডুর বিভিন্ন ব্যাংকেও বেনামে লেনদেন করছেন।.
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ঢেঁকিবুনিয়া বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী আমান উল্লাহ এখন অবস্থান করছেন উখিয়ার বালুখালী-২ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। তিনি বলেন, ‘রাখাইনে বসবাসকারী রোহিঙ্গা ব্যবসায়ীরা মূলত ব্যাংকে টাকা জমা রাখে না। আমাদের মিয়ানমার সরকার নাগরিকত্ব দেয়নি। এ কারণে ব্যাংকে হিসাব খোলাও কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ফলে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী টাকা জমা না করে বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করে। এ জন্য নগদে তেমন কোনও অর্থ জমা থাকে না। আর যেসব ব্যবসায়ী বেশি অর্থের মালিক তাদের অনেকেই বাংলাদেশে পরিচিত বিশ্বস্তজনের ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা রাখেন। একইভাবে স্থানীয় মগদের সঙ্গে যাদের সু-সম্পর্ক ছিল তাদের মাধ্যমে অনেকেই মংডুর বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ জমা রেখেছেন।’
উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বলিবাজারের মৌলভী জাফর আলম বলেন, ‘রাখাইনে মূলত যারা বসবাস করেন, তাদের একটি নির্দিষ্ট সম্পত্তির ওপরে অর্থ জমা হলে স্থানীয় প্রশাসন ও মগরা এসে লুট করে নিয়ে যায়। এ কারণে রাখাইনের অধিকাংশ মানুষ গরিব। ব্যাংকে জমা রাখার মতো কোনও অর্থ তাদের কাছে জমা থাকে না। আর যদি অর্থ জমা রাখার মতো হয় তাহলে অনেকেই সীমান্তের এপারে বসবাসরত বাংলাদেশিদের নামে ব্যাংক হিসাব খুলে জমা রাখে।’ তবে কোথায়, কোন ব্যাংকে রোহিঙ্গাদের অর্থের লেনদেন হচ্ছে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি এই রোহিঙ্গা।
উখিয়ার মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গা দিল মোহাম্মদও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘রাখাইনে মগদের সঙ্গে যাদের সখ্য ছিল মূলত তারাই মংডু টাউনশিপ এলাকায় ব্যাংক খুলে অর্থ জমা রেখেছেন। রাখাইনে যখন সহিংসতা শুরু হয় তখন অনেকের টাকা সেই ব্যাংকে রয়ে গেছে।’
তবে তাদের এ দাবি অস্বীকার করেছেন বাংলাদেশি ব্যাংকাররা। কক্সবাজারের একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ব্যাংকার শফিউল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনও ব্যাংকে হিসাব খুলে রোহিঙ্গাদের টাকা জমা রাখার সুযোগ নেই। কারণ,একটি ব্যাংক হিসাব খুলতে অনেক তথ্য ও বৈধ কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপির প্রয়োজন হয়। কেউ যদি ‘এনআইডি’ কার্ডের নকল কপি দেয়, সে ক্ষেত্রেও ব্যাংকে নির্বাচন অফিসের ওয়েবসাইটে গিয়ে যাচাইবাচাই করা হয়। মূলত সঠিক কাগজপত্র পাওয়া গেলেই ব্যাংকে হিসাব খোলা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনও রোহিঙ্গা যদি বাংলাদেশের নাগরিকদের নামে ব্যাংকে হিসাব খুলে লেনদেন করেন সেক্ষেত্রে আমাদের করার কিছুই থাকে না। বিশেষ করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর সব ক্ষেত্রে প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে।’