শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে মুঠোফোন চুরির অপবাদে কতিপয় দুর্বৃত্তের হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার কিশোরের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তাকে নালিতাবাড়ী স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করান। এর আগে বুধবার ওই কিশোরের বাড়িতে গিয়ে তিনি তার চিকিৎসা সহায়তা হিসেবে নগদ ৫ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন।
পারিবারিক ও উপজেলা প্রশাসন সুত্র জানায়, গত রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের পশ্চিম রাজনগর বন্ধুপাড়া গ্রামে আলী হোসেনের বাড়ি থেকে একটি মুঠোফোন চুরি হয়। এতে আলী হোসেনের পরিবার ওই কিশোরকে সন্দেহ করে। এক পর্যায়ে ইসহাক, রবিউলসহ সঙ্গীয়রা কিশোরকে রাস্তা থেকে ধরে এনে নগ্ন করে বেধড়ক শারীরিক নির্যাতন করে ও এর ভিডিও চিত্র ধারন করে। একপর্যায়ে ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে।
এদিকে, দুর্বৃত্তের হাতে আহত হয়ে ওই কিশোর অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। পরে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এরই প্রেক্ষিতে গত সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) শেরপুরের পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জড়িতদের আইনের আওতায় অনার জন্য স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেন।
পরবর্তীতে কিশোরের নানা মকবুল হোসেন বাদী হয়ে নালিতাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ওই গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে ইসহাক মিয়া (৩০) ও রবিউল মিয়া (২০)। গ্রেপ্তারকৃত দুই ভাইকে মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। আদালতের বিচারিক হাকিম মোহসিনা হোসেন তুশি আগামী রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রিমান্ড শুনানির তারিখ ধার্য করে তাদের জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
অপরদিকে, চিকিৎসা অসমাপ্ত রেখে গত বুধবার ওই কিশোর বাড়ি চলে যায়। কিন্তু পরদিন বৃহস্পতিবার পুণরায় শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে নালিতাবাড়ীর ইউএনও ওই কিশোরকে হাসপাতালে ভর্তি করান।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক আনারকলি মাহবুব দরিদ্র অসহায় ওই কিশোরের খোঁজখবর নিতে ও চিকিৎসা সহায়তার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করতে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) লুবনা শারমিনকে নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে এই দুই কর্মকর্তা বুধবার বিকেলে রাজনগর ওই কিশোরের বাড়িতে চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং তার পরিবারের কাছে নগদ ৫ হাজার টাকা চিকিৎসা সহায়তা তুলে দেন। পাশাপাশি সম্পুর্ন সুস্থ্য হওয়ার জন্য আবার কিশোরকে নালিতাবাড়ী হাসপাতালে ভর্তি করান।
নালিতাবাড়ী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বছির আহমেদ বাদল জানান, এজাহার নামীয় তিন আসামীর মধ্যে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুর রহমান বলেন, এই ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক, আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই কিশোরের ন্যায় বিচার প্রাপ্তীর জন্য সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করব। পাশাপাশি ছেলেটি সুস্থ্য না হয়ে উঠা পর্যন্ত আমরা তার পাশে থাকব।