শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে স্বাক্ষর ও কাগজপত্র জালিয়াতির মামলায় সহোদরসহ শ্রী ঘরে গেছেন উপজেলার ৬ নং কাকরকান্দি ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার মফিজুল ইসলাম বাচ্চু।
৫ আগস্ট শনিবার দিবাগত রাতে নালিতাবাড়ী শহরের চকপাড়াস্থ বাসা থেকে তাকে অভিনব কায়দায় গ্রেফতার করে রবিবার আদালতে পাঠায় থানা পুলিশ।
পুলিশ জানায়, সম্প্রতি অনুদানভুক্ত করার জন্য সারাদেশে স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসা সমূহের তালিকা জমা দিতে নির্দেশ দেয় সরকার। এরই প্রেক্ষিতে নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের ‘বরুয়াজানি স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসা’র ভুয়া কমিটি সাজিয়ে নিজেকে সভাপতি দেখিয়ে আগের কমিটির সকলের জাল স্বাক্ষর করে এবং যথারীতি চারজন শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন করে ওই ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার মফিজুল ইসলাম বাচ্চু। পরে ওই কাগজপত্র উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা প্রদান করে।
এদিকে আগে থেকেই জানতে পেরে প্রকৃত কমিটির লোকজন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ জানানোর পরও অর্থের বিনিময়ে জালিয়াতি করা ওই কাগজপত্র জমা নেয় উপজেলা শিক্ষা অফিস কর্তৃপক্ষ। এমতাবস্থায় ভোক্তভোগীদের পক্ষে জমিদাতা হাফিজুল ইসলাম আদালতের শরণাপন্ন হন। পরে শেরপুরের সিআর আমলি আদালত নালিতাবাড়ী জালিয়াতিকারী কাজীসহ অন্যান্য আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করে। ওই পরোয়ানার ভিত্তিতে শনিবার দিবাগত রাতে থানা পুলিশের এসআই নজরুল ইসলামের নেতৃত্ব অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় কাজী মফিজুলের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে পুলিশ ছদ্মবেশে ২০ টাকার টাকার বিনিময়ে একটি প্রেমঘটিত বিয়ে পড়ানোর প্রস্তাব দেন। এতে সম্মত হয়ে ওই কাজী তারই সহোদর ওবায়দুল কবিরকে এগিয়ে নিতে পাঠান। এসময় পুলিশ মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামী ওবায়দুল ও মফিজুলকে গ্রেফতার করে রবিবার শেরপুর আদালতে প্রেরণ করে।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি তদন্ত সারোয়ার হোসেন জানান, আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মফিজুল ইসলাম বাচ্চু ফুলপুর উপজেলার ছনধরা ইউনিয়নের রামসোনা গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। কিন্তু দীর্ঘদিন আগে তার পরিচয় গোপন করে কাকরকান্দি ইউনিয়নের নাগরিকত্ব সনদ নিয়ে ওই ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ লাভ করে। শুধু তাই নয়, ফুলপুর ডিগ্রী কলেজ থেকে রাস্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে ২০০০ সালে বিএ পাশ করার পর ২০০২ সালে দারুল ইসহান ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থের বিনিময়ে ইংরেজি বিষয়ে এমএ পাশের ভুয়া সনদ সংগ্রহ করে সে। এরপর ২০১৩ সালের ৭ জুলাই নালিতাবাড়ীর নিশ্চিন্তপুর আলিম মাদরাসায় ইংরেজি প্রভাষক হিসেবে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চাকরী নেয়।
এ বিষয়ে কাকরকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান শহীদ উল্লাহ তালুকদার মুকুল মাদরাসার কাগজপত্র জালিয়াতির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ওই কাজী আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা নন। পূববর্তী চেয়ারম্যান তাকে নাগরিকত্বের সনদ প্রদান করেছেন। কাজেই নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে তার নিয়োগও অবৈধ। আমরা এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা চেয়ে লিখিত অভিযোগ দাখিল করছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর কবীর অর্থের বিনিময়ে ভুয়া কাগজপত্র জমা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, আমি এরকম কোন কাগজপত্র জমা নেইনি।
শেরপুর টাইমস/বা.স