শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে প্রসন্ন কুমার সাহা প্রি ক্যাডেট একাডেমি নামে একটি বেসরকারীভাবে প্রতিষ্ঠিত প্রায় একুশ বছরের পুরনো একটি বিদ্যালয় দখল করে ‘বেগম রোকেয়া বউ বাজার’ নামে কাঁচা বাজার বসানোর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) দুপুরে স্থানীয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে পৌর কর্তৃপক্ষের প্রতি দখলের অভিযোগ আনা হয়। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শহরের সাহাপাড়া মহল্লায় ২২ শতাংশ জমি হীরক চন্দ্র চৌধুরীর দেবোত্তর সম্পত্তি পত্তনমূলে প্রয়াত প্রসন্ন কুমার সাহা ভোগদখল করে আসছিলেন। প্রসন্ন কুমার সাহার মৃত্যুর পর তার চার উত্তরাধিকারী ১৯৯৯ সালে উক্ত ভূমি প্রসন্ন কুমার সাহা একাডেমির নামে স্বত্যার্পণ দলিলে দান করেন। ফলে তখন থেকে ওই জমিতে প্রসন্ন কুমার সাহা একাডেমি নামে একটি স্কুল পরিচালিত হয়ে আসছে।
এদিকে, প্রসন্ন কুমারে মৃত্যুর পর তার উত্তারাধিকারীগণ ১৯৭৬ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত উক্ত ভূমির খাজনা দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু ভূমিটি ভুলবশত বিআরএস রেকর্ড না হওয়ায় জমিটি এনিমি উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে নোটিশ জারী করে ইজারা নেওয়ার জন্য আহবান করা হয়। এসময় প্রসন্ন কুমারের উত্তরাধিকারীগণ উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হলে হাইকোর্ট ১৯৯৭ সালে তাদের পক্ষে রায় ঘোষণা করে। ওই রায়ের পর ল্যান্ড সার্ভে আপীল বোর্ড সুপ্রীম কোর্টে আপীল করে। পরে ২০১৬ সালে সুপ্রীম কোর্ট নালিশি ভূমিকে ব্যক্তি মালিকানাধীন বলে রায় ঘোষণা করে। এরপর থেকে প্রসন্ন কুমারের উত্তাধিকারীগণ নিজেদের নামে খারিজ করতে চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন।
এরই মধ্যে কিছুদিন আগে স্থানীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধি সুনীল উল্লেখিত জমির একাংশ ভূমিহীন হিসেবে দখলে নিতে চেষ্টা করে। এমতাবস্থায় একাডেমি কর্তৃপক্ষ সুনীলকে তাড়িয়ে দিলে সে পুনরায় সংগঠিত হয়ে ওই জমিতে মন্দির নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এবং পুকুরে মাটি ভরাট কার্যক্রম শুরু করে। পরে প্রশাসনের বাধার মুখে বালু ভরাট বন্ধ হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, গত ২৮ জুন সন্ধ্যায় পৌর মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিকের নেতৃত্বে ‘প্রসন্ন কুমার সাহা একাডেমি’ দখল করে একাডেমির সাইন বোর্ডের উপরে ‘বেগম রোকেয়া বউ বাজার’ নামে সাইন বোর্ড লাগানো হয়। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির তালা ভেঙ্গে নতুন তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পরে একাডেমির ঘরসহ এর চত্বরে কাঁচা বাজার বসানো হয়।
এ সংবাদ সম্মেলনে একাডেমির অধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্তারুজ্জামান, জমিদাতা সদস্য গোপাল চন্দ্র সাহা, একাডেমি পরিচালনা পরিষদের সদস্য ব্যবসায়ী নেতা বাদল চন্দ্র সাহা, ব্যবসায়ী নেতা ডাঃ কিরণ দত্ত, এ্যাডভোকেট সুধাংশু কালোয়ার, এ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান, রমজান আলী, মুঞ্জুরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে, পৌর মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, কে বা কারা দখলে নিয়েছে আমরা জানি না। এটি সরকারী জায়গা, সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে আমরা সরকারের সে সিদ্ধান্তে সহযোগিতা করব।
এ বিষয়ে শেরপুরের জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব ভূমির মালিকানার বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে জানিয়ে বলেন, উল্লেখিত ভূমিটি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসকের অধীনে হলেও ইজারা ব্যতীত ওই জমিতে পৌর কর্তৃপক্ষের প্রবেশ বা হস্তক্ষেপের কোন সুযোগ নেই।