শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ড প্রদানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কর্তৃক ঘুষ গ্রহণের প্রতিবাদ করায় পিটিয়ে এবং কুপিয়ে সুজন মিয়া (৩০) নামে যুবককে হত্যা করার অভিযোগ ওঠেছে এক ইউ সদস্য ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের কেরেঙ্গাপাড়া গ্রামে হামলার এ ঘটনার পর গতকাল শনিবার (২১ নভেম্বর) রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুজনের মৃত্যু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল জলিল প্রায় দুই বছর আগে কেরেঙ্গাপাড়া গ্রামের শারিরিক প্রতিবন্ধি আব্দুল হালিমের (২৩) কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করে হালিমের নামে প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ড করে দেন। কয়েক দফায় ভাতা উত্তোলনের পর সম্প্রতি স্মার্ট কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্র কোনটিই না থাকায় অনলাইনে নিবন্ধন সংক্রান্ত জটিলতায় পড়ে হালিম। এমতাবস্থায় ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি প্রকাশ করে দেয় সে। পরে গত ১০ নভেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে নিহত যুবক সুজন মিয়ার দোকানে ইউপি সদস্য আব্দুল জলিল গেলে সুজন মিয়া ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে প্রতিবাদ করে। এতে ইউপি সদস্য আব্দুল জলিল ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়ি থেকে ভাই-ছেলেদের ডেকে এনে আকস্মিক সুজনের উপর হামলা করে। এসময় ফেরাতে এসে সুজনের ছোট ভাই গ্রাম পুলিশ সুমন, সুমনের স্ত্রী উর্মি, মা ফরিদা ইয়াসমিন, ছোট ভাই রাজুসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। ভেঙ্গে ফেলা হয় সুজনের দোকানের আসবাব, তছনছ করে ফেলা হয় মালপত্র। গুরুতর আহত সুজনকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা হাসপাতালে নিতে চাইলে ইউপি সদস্যের লোকজন তাদের উপর চড়াও হয় এবং হুমকী দেয়।
পরে গুরুতর আহত সুজনকে প্রথমে নালিতাবাড়ী, পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাতেই তাকে ঢাকার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে মাথায় অস্ত্রপাচারের পর বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হলে সুজনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় পুনরায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে আবারও অপারেশন করে আইসিইউতে রাখা হয়। এরপর শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে সে মৃত্যুবরণ করে।
এদিকে, হামলার ঘটনায় উভয়পক্ষ থেকে পৃথক মামলা করা হলে ইউপি সদস্যের পক্ষের দুইজন আদালত থেকে জামিনে এসেছেন। পলাতক রয়েছে ইউপি সদস্য আব্দুল জলিল। তবে সুজন নিহতের ঘটনায় ময়নাতদন্তসাপেক্ষে সুজনদের দায়ের করা মামলাটি হত্যা মামলায় রূপ নেবে। নিহত সুজন প্রায় এক বছর আগে বিয়ে করে। বর্তমানে তার দুই মাস বয়সী সন্তান রয়েছে।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বছির আহমদ বাদল সুজনের মৃত্যুর ঘটনাটি নিশ্চিত করে জানান, এবিষয়ে আগের করা হত্যা চেষ্টার মামলাটি এখন হত্যা মামলায় রুপান্তরিত হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।