এই তো কয়েক মাস আগের কথা সংসারের অভাব অনটনের কারণে রমজান আলী তাঁর দশম শ্রেণী পড়ুয়া মেয়ে কে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু মেয়েটি লেখাপড়া করতে চায়। মেয়ের পাশে দাঁড়ান মা। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বাঁধে। মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় রমজান আালী স্ত্রীকে তাঁর বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। তাও মা তাঁর মেয়ের লেখাপড়া জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান। তিনমাস পরে রমজান আলী নিজের ভুল বুঝতে পেওে তাঁর স্ত্রীকে বাবার বাড়ি থেকে ফিরিয়ে আনেন। ফলে আবার পুরোদমে রমজান আলীর মেয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ পায়। ফলে দারিদ্রতা ও নানা বাধাঁ পেড়িয়ে এবং মা‘র সাহায্যেও কারণে এ বছর বছর রমজান আলীর মেয়ে এসএসসিতে নন্নী উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পায়।
গল্পটা শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী ইউনিয়নের আমলাতলী গ্রামের দিনমজুর রমজান আলীর অদম্য মেধাবী মেয়ে রুমানা জান্নাতের।
অদম্য মেধাবী রুমানা জান্নাতের মা‘র সাথে কথা বলে জানা যায়, দিনমজুর রমজান আলীর উপর্জনের টাকা দিয়ে রুমানাদের সংসার চলে। তাঁদের বাড়ি বলতে পাচঁ শতক জমির উপর মাটির একটি ঘর। এই ঘরে দুটি চকিতেই তাঁদের বসবাস। দারিদ্রতারণ মাঝে মাঝেই না খেয়ে দিন কাটাতে হয়। বড় মেয়ে সুলতানা রাজিয়া এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে শেরপুর সরকারী কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ে। ছোট ছেলে রিয়াজ আহম্মেদ নবম শ্রেনিতে পড়ে। সে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেটে (জেএসসি) জিপিএ-৫ পেয়েছে।
অপরদিকে, রুমানার প্রতিদিন তিন কিলোমিটার হেটে বিদ্যালয়ে যেতে হতো। অর্থভাবে প্রাইভেট কিংবা কোচিং করার সুযোগ হয়নি। এতো বাধা সত্তে¡ও সে দমে যায় নি।
মেয়ের এই সাফল্যে সবাই আনন্দিত হলেও দারিদ্রতায় পড়ালেখা চালিয়ে নেওয়ার সঙ্কায় প্রকাশ করে রুমানার মা রওশানারা আক্তার বলেন, এদের পড়ালেখার জন্য এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকা ঋণ করছি। একজন মানুষের উপার্জন দিয়ে সংসার চালানো বিরাট কঠিন। কাজ না পাইলে কোন কোন দিন না খাইয়া থাকুন লাগে বলে কেঁদে উঠেন।
রুমানা জান্নাত বলেন, আমি আরো লেখাপড়া করতে চাই। পড়ালেখা করে চিকিৎসক হতে চাই। গরিব অসহায় মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিতে চাই। সামাজিক সংগঠন ‘ডপস্’ এর শাহিন স্যারসহ যারা আমার পাশে ছিলেন, তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
নন্নী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.সাইফুল ইসলাম বলেন, বাবা দিনমুজুরী করেন। কিন্ত তিনটি ছেলে মেয়েই অত্যান্ত মেধাবী। রুমানা জান্নাতের পড়ালেখার সুযোগ পেলে মেয়েটি ভবিষ্যতে আরও ভাল ফল করতে পারবে।