শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বউভাত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে আসা উপহার সামগ্রী ফেরত দিয়ে এক ব্যতিক্রমী বউভাত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছেন এবাদুল ইসলাম নামের এক বর। এবাদুল উপজেলার নন্নী ইউনিয়নের বাজুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। গতকাল মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে তার নিজ বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।
প্রচলিত রীতি অনুযায়ী বিয়ে বা বউভাতের দাওয়াত অনুষ্ঠানে উপহার দিতে হয়। আমন্ত্রিত অতিথিরা দাওয়াত খেতে উপহার নিয়ে আসেন। এক্ষেত্রে কেউ উপহার সামগ্রী আবার কেউ নগদ টাকা দিয়ে থাকেন। এসব উপহার নেওয়ার জন্য চেয়ার টেবিল নিয়ে কাউকে বসে থাকতে দেখা যায় অনুষ্ঠানস্থলে। তবে ব্যতিক্রম চিত্র দেখা গেছে এবাদুলের বউভাত অনুষ্ঠানে। এতে অতিথিদের নিয়ে আসা উপহার ফেরত দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার নন্নী ইউনিয়নের বাজুপাড়া গ্রামের লুতফর রহমানের ছেলে এবাদুল ইসলামের বিয়ের বউভাত অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ব্যতিক্রমী ওই অনুষ্ঠানটি এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
সুত্রে জানা গেছে, গত সোমবার একই ইউনিয়নের উত্তরবন্দ গ্রামের আমের আলীর মেয়ে আয়েশা বেগমের সঙ্গে এবাদুল ইসলামের বিয়ে হয়। মঙ্গলবার বরের বাড়িতে বউভাত অনুষ্ঠানে তিন শতাধিক মানুষকে দাওয়াত দেওয়া হয়। বউভাত অনুষ্ঠানে অতিথিদের আনা উপহার নেওয়ার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এতে খাবার খাওয়ার পর বাধ্য হয়ে উপহার ফেরত নিয়ে গেছেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।
দাওয়াত খাওয়া হাকিম মো. আব্দুর রব বলেন, ‘বিয়ের দাওয়াতে গেলে তো আর খালি হাতে যাওয়া যায় না। হয়তো কোনো উপহার বা নগদ টাকা দেই। এই বউভাতের অনুষ্ঠানেও তেমন প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু উপহার দেওয়ার মতো জায়গা বা কোনো মানুষ না পেয়ে অবাক হয়েছি। পরে বরের বাবাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, অনুষ্ঠানে উপহার নেওয়া হচ্ছে না।’
বরের বড় ভাই লালচান হোসাইন লাভলু বলেন, ‘প্রতিটি বিয়ে বাড়িতে উপহার সামগ্রী ও অর্থ সংগ্রহে একটি টেবিল বসানো হয়। এতে আমন্ত্রিত অতিথিরা সামাজিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে বাধ্য হয়ে উপহার সামগ্রী বা টাকা দেন। সামাজিকতা রক্ষার স্বার্থে অনেক সময় তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এই অমানবিক সামাজিক রীতি বর্জন করতেই আমার ছোট ভাইয়ের বউভাত অনুষ্ঠানে কোনো উপহার সামগ্রী নেওয়া হয়নি। আমরা শুধু নব দম্পতির জন্য দোয়া চাই।’
বরের বাবা লুতফর রহমান বলেন, ‘দাওয়াত করে মানুষকে খাওয়াতে এনে যদি চেয়ার টেবিল বসিয়ে উপহার নেওয়ার নামে লজ্জা দেই। তবে এটা হোটেল ব্যবসা ছাড়া আর কিছু না। টাকা দিয়েই যদি খেতে হয়, তবে মানুষ হোটেলে গিয়েই খেতে পারে। আমন্ত্রিত অতিথিদের আমি আমার সাধ্যমতো আপ্যায়নের চেষ্টা করেছি। বিনিময়ে কারও কাছ থেকে উপহার নেওয়া হয়নি।’