শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের দরিদ্র অসহায় আসাদ নামে এক প্রান্তীক চাষীর বেদখল করতে চাওয়া জমিতে গ্রামবাসীরা মিলে চলতি আবাদের বোরোধান লাগিয়ে দিয়েছেন। একইসাথে এর প্রতিবাদে তারা অসহায় আসাদের পক্ষে মাইকিং করে স্থানীয় আমবাগান বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সোমবার (২২ জানুয়ারি) সকালে উপজেলার বাতকুচি বালাপাড়া গ্রামের ফসলি মাঠের ওই জমিতে ধানের চারা রোপন করেন।
গ্রামবাসীরা জানান, উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বাতকুচি গ্রামের বাসিন্দা আসাদ মিয়া তার পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া ৫০ শতাংশ জমি প্রায় তিন বছর আগে বন্ধক নেন পাশ্ববর্তী নন্নী ইউনিয়নের অভয়পুর গ্রামের বাসিন্দা প্রভাবশালী বশর আলী হাজী নামের এক ব্যক্তি। পরবর্তীতে আসাদ বন্ধকীর টাকা ফেরত দিতে চাইলে বশর হাজী বলেন ওই জমি তাদের কাছ থেকে ক্রয় করে নিয়েছেন। এনিয়ে দুই পক্ষের মাঝে প্রায় তিন বছর যাবত বিরোধ চলে আসছিল। গত শনিবার বশর হাজী তার লোকজন নিয়ে আসাদের ভোগ দখলকৃত বোরোধান লাগানো খেতে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করে নতুন করে লাগাতে যান। এতে দুই পক্ষের মাঝে সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় আসাদ, নুর ইসলাম, লাল মিয়া, সুলতান ও আসাদের স্ত্রী হাফেজা বেগমকে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করে বশর হাজীর লোকজন। পরে এলাকাবাসী তাদেরকে উদ্ধার করে প্রথমে শেরপুর সদর হাসপাতালে ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদেরকে পাঠানো হয়। বর্তমানে তারা সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে, এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা সোমবার সকালে মাইকিং করে একত্রিত হয়ে বাতকুচি ও আমবাগান বাজারের পাশ্ববর্তী এলাকার প্রায় ২ সহ¯্রাধিক নারী পরুষের উপস্থিততে অসহায় আসাদের বেদখল করতে চাওয়া ৫০ শতাংশ জমিতে নতুন করে চাষ করে বোরোধান লাগিয়ে দেন গ্রামবাসী। একইসাথে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানান ও বিক্ষোভ করেন। গ্রামবাসীরা জানান, বশর হাজী অত্যন্ত খারাপ প্রকৃতির লোক। সে নিজের ভাই ভাতিজার জমিও জাল দলিল করে জবর দখল করে নিয়েছেন। আমরা এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাই ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করি।
আসাদের মেয়ে আলপিনা ও আরজিনা জানান, বশর হাজী আমার বাবার ভোগ দখলীয় ৫০ শতাংশ জমি জবর দখল করতে চাইছে। এসব নিয়ে আমাদের সাথে গন্ডগোল চলছে। গত শনিবার আমার বাবা মাসহ পাঁচজনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে বশর হাজীর লোকজন। তারা আহত হয়ে এখন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
সংশ্লিষ্ট বাতকুচি ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনছারুল হক জানান, বেদখল করতে চাওয়া ৫০ শতাংশ জমি আসাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। আসাদ ওই জমি বন্ধক দিলে বশর হাজী গোপনে তার নামে নামজারী করে নিয়েছিল। পরে আসাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তা বাতিল হয়ে গেছে। বশর হাজীর ওই দরিদ্র অসহায় আসাদের পৈত্রিক জমি দখল করতে যাওয়া উচিত হয়নি।
এই ঘটনা সম্পর্কে বক্তব্য জানতে বশর আলী হাজীর মুঠোফোনে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল আলম ভুইয়া জানান, বোরোধান খেত লাগানোর বিষয়ে এখনো কোন অভিযোগ পাইনি। ধান লাগানোর ঘটনা শোনার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে।