শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পোড়াগাঁও ইউনিয়নের গারো পাহাড়ি এলাকায় বন্যহাতির পাল অব্যাহত তান্ডব চালিয়ে বসতবাড়ি তছনছ ও বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) রাতব্যাপী উপজেলার বাতকুচি টিলাপাড়া গ্রামে ওই তান্ডব চালায়। তান্ডব চালিয়ে পাহাড়ের ঢালে বসবাসরত আব্দুল বছির, হাবিবুর রহমান, আব্দুর রেজ্জাক, ছুরতন বেওয়া, রহিমা বেগম, মহির উদ্দিন, হাফিজুর রহমান ও হাবি মিস্ত্রির বসতঘর ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়েছে। একইসাথে হারেজ আলী, উমর আলী, রহিম সওদাগর, শামিম মিয়া ও কবির হোসেনসহ বেশ কয়েকজন দরিদ্র কৃষকের পাহাড়ের ঢালে আবাদকৃত বোরো ধানক্ষেত খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে বিনষ্ট করেছে বন্যহাতির দল। ঘরবাড়ি ও ফসল নষ্ট করায় এসব পরিবার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক মহির উদ্দিন বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ যাবত ৪০/৪৫ টি বন্যহাতির পাল দিনের বেলায় মধুটিলা ইকোপার্কের পুর্ব দিকে বাতকুচি এলাকার হুকুমের টিলা নামক গভীর পাহাড়ে অবস্থান করে আর সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেই খাদ্যের সন্ধানে বাতকুচি, সমেশ্চুড়া ও বুরুঙ্গা কালাপানি এলাকার ফসলি জমিতে নেমে এসে হানা দিচ্ছে। এসময় হাতির পাল বোরো ধানক্ষেত খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে বিনষ্ট করে। আবার কোন কোন সময়ে বসতবাড়িতে রোপিত কলাগাছ, সুপারি গাছ ও নারিকেল গাছসহ সবজি আবাদ খেয়ে সাবার করে দিচ্ছে। এমনকি ক্ষতিগ্রস্থদের বাড়িতে স্থাপন করা পানির টিউবওয়েল শুঁড় দিয়ে পেচিয়ে টেনে হিঁচড়ে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। গ্রামের দরিদ্র কৃষকরা তাদের জানমাল রক্ষা করতে রাত জেগে মশাল জ্বালিয়ে ডাক চিৎকার করে ও পটকা ফুটিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে। ক্ষুধার্ত হাতিগুলো কোন বাঁধাই এখন আর মানছে না। গত ২৫ এপ্রিল একই এলাকার উমর আলী মিস্ত্রি নামের এক কৃষককে পা দিয়ে পিষে নিহত করেছে বন্যহাতি। এরপর থেকে ওই এলাকায় হাতি আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষজন এখন বাড়িঘর ফেলে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক আব্দুল বছির, হাবিবুর রহমান ও আব্দুর রেজ্জাক বলেন, ৪০/৪৫ টির বন্যহাতির দল এখন কয়েকটি উপদলে বিভক্ত হয়ে একযোগে ভিন্নভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় তান্ডব চালিয়ে ঘরবাড়ি ও বোরো ফসলের ক্ষতি করছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের কেউ খোঁজখবর নিচ্ছে না। বন্যহাতি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার সরকারি ক্ষতিপুরণ কিভাবে পাবে তা তারা জানেন না।
তারা আরো জানান, এই বন্যহাতি গুলো প্রায় দুই যুগ আগে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। বংশ বিস্তার করে এদের দল দিন দিন বড় হচ্ছে। এরা বাংলাদেশে অবাধে চলাচল করে গারো পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করছে। গ্রামবাসীরা হৈ-হুল্লোড় করে ঢাকঢোল পিটিয়ে শব্দ করে উত্তর দিকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ের দিকে তাড়িয়ে দিলে ভারতীয় বিএসএফ তাদের কাঁটা তারের বেড়া ও গেইট বন্ধ করে দেয়। তারা কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলায় বন্যহাতি আর ভারতে প্রবেশ তথা ফেরত যেতে পারছে না। ফলে বন্যহাতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে স্বাধীনভাবে চলাচল করে মাঝে মধ্যেই এলাকার জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করছে। এ নিয়ে প্রায় দুই যুগ ধরে মানুষ আর বন্যহাতির মধ্যে দ্বন্ধ চলছে। মানুষও মরছে হাতিও মরছে। কিন্তু এর স্থায়ী কোন সমাধান হচ্ছে না। তারা বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের যৌথ বৈঠকের মাধ্যমে বন্যহাতির সমস্যা সমাধান করা দরকার।
ময়মনসিংহ বনবিভাগের মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, বন্যহাতি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার বিশেষ করে কেউ নিহত হলে ৩ লাখ, আহত হলে ১ লাখ ও ফসলের ক্ষতির জন্য ৫০ হাজার টাকা করে সরকার ক্ষতিপুরণ দিচ্ছে। তাই বন্যহাতিকে উত্যক্ত না করে সকলকে নিরাপদ দুরত্বে অবস্থান করার পরামর্শ দেন তিনি।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইলিশায় রিছিল বলেন, গারো পাহাড়ি এলাকায় বন্যহাতির তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্থদের পক্ষ থেকে আবেদন নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে বন বিভাগের মাধ্যমে সরকারিভাবে ক্ষতিপুরণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া হাতির কবল থেকে জানমাল রক্ষার জন্য রাতের বেলায় মশাল জ্বালাতে কেরোসিন তেল বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।