শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বন্যহাতির আক্রমনে বিজয় সাংমা (৫২) নামে এক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আদিবাসী কৃষক নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) রাতে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তিনি উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের পুর্ব সমশ্চুড়া গ্রামের স্টীপেন মারাকের ছেলে। এর আগে তিনি গত মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) রাতে মধুটিলা ইকোপার্ক সংলগ্ন কালাপানি এলাকার সীমান্ত সড়কের পাশে নিজ আবাদি বোরো ধান ক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে বন্য হাতির আক্রমণে গুরুতর আহত হন।
সুত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন যাবত নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় খাদ্যের সন্ধানে প্রায় ৪০/৫০ টি বন্যহাতির দল বোরো ধান ক্ষেতে তান্ডব চালিয়ে আসছে। এলাকার কৃষকরা ফসল রক্ষা করতে রাত জেগে ধান ক্ষেত পাহারা দিচ্ছিল। মঙ্গলবার গভীর রাতে বন্যহাতির দলটি পোড়াগাঁও ইউনিয়নের পুর্ব সমশ্চুড়া গ্রামের কৃষক বিজয় সাংমার আবাদকৃত বোরো ধান ক্ষেতে হানা দেয়। এসময় বিজয় সাংমা ফসল রক্ষা করতে হাতির দলটিকে তাড়া করেন। তাড়া খেয়ে এক পর্যায়ে বন্যহাতির দলটি ক্ষুব্ধ হয়ে বিজয় সাংমার উপর পাল্টা আক্রমণ করে। এসময় হাতির দল বিজয় সাংমার বুকে ও পেটে পা দিয়ে লাথি মারে এবং তলপেটে চাপা দেয়। পরে স্বজনরা হাতির দলটিকে তাড়িয়ে দিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় বিজয় সাংমাকে উদ্ধার করে নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা বিজয়কে উন্নত চিকিৎসার জন্য শেরপুর সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কৃষক বিজয় সাংমার মৃত্যু হয়।
ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জকর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, নিহত আদিবাসী কৃষক বিজয় সাংমার পরিবারকে বন বিভাগের পক্ষ থেকে ৩ লাখ টাকা ক্ষতিপুরণ দেওয়া হবে। এছাড়া বন্যহাতির আক্রমণে পাহাড়ি এলাকার মানুষের জানমাল রক্ষার্থে বন বিভাগ সচেষ্ট রয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক বলেন, পুলিশ নিহত বিজয় সাংমার সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে বিজয় সাংমার মৃত্যুতে কোন সন্দেহ না থাকায় আবেদনের প্রেক্ষিতে বিনা ময়নাতদন্তে লাশ সৎকার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন, নিহত কৃষক বিজয় সাংমার পরিবারকে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা নগদ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে আবেদন সাপেক্ষে বন বিভাগ থেকে আরো ৩ লাখ টাকা ক্ষতিপুরণ পাবেন তার পরিবার।