শেরপুরের শস্য ভান্ডারখ্যাত নালিতাবাড়ীতে তৈল জাতীয় ফসল সরিষা উৎপাদনে ঝুঁকছেন কৃষকরা। তাই আমন ফসল ঘরে তোলার পর ওই জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন তারা। উপজেলার অধিকাংশ এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ জুড়ে এখন যেন হলুদের সমারোহ।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, নালিতাবাড়ী উপজেলায় তৈল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে সরকারী নির্দেশনায় উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ৫ হাজার ৫০০ জন কৃষককে প্রণোদনার আওতায় আনা হয়েছে। এলাকার কৃষকরা প্রণোদনা ছাড়াও নিজ উদ্যোগে এ বছর ১ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। যা গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে বারি- ১৪ জাত ও দেশী জাতের সরিষা রয়েছে। ইতোমধ্যে সারামাঠ হলুদে ছেঁয়ে গেছে। মাঠে মাঠে মৌ মৌ গন্ধে মধু সংগ্রহ করছে মৌমাছিরা। এতে আশায় বুক বাঁধছেন কৃষকরা। নতুন সরিষা উত্তোলণের পর আবার তারা ওই জমিতে বোরো ধান আবাদ করবেন। একই জমিতে আমন আবাদের আগাম জাতের ধান কাটার পর সরিষার আবাদ করেছেন। অল্প কিছু দিন পরেই সরিষা ঘরে তুলবেন। এরপর আবার বোরো আবাদে ব্যস্ত হবেন। সরিষার তোলার পর ওই জমিতে শতকরা ৩০ ভাগ রাসায়নিক সার কম লাগায় বোরো আবাদে কৃষকের খরচ কম হবে। এছাড়া সরিষা তেলের নিজেদের পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন কৃষকরা। তাই নালিতাবাড়ীর কৃষকরা দিন দিন সরিষার আবাদের দিকে ঝুঁকছেন।
নালিতাবাড়ী উপজেলার মরিচপুরান ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি সরিষার আবাদ হয়েছে। ওই ইউনিয়নের টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের পাশের মাঠে দিগন্তজুড়ে সরিষার মাঠ। ওই মাঠের একসাথে ১০০ একর জমিতে সরিষা বুনেছেন কৃষকরা। আবাদের পরিস্থিতিও অনুকুলে আছে। কৃষি বিভাগের লোকজন প্রতিদিন খোঁজখবর নিচ্ছেন ও কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দিচ্ছেন। আর কিছুদিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তুলবেন তারা।
ওই এলাকার কৃষক জিয়াউল হক বলেন, আমি এবার ৪০ শতাংশ জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনার বারি- ১৪ জাতের সরিষার বীজ ও সার পেয়েছিলাম। তাদের পরামর্শে সরিষা খেতের যন্ত নিচ্ছি। আবাদ খুব ভালো হয়েছে। আশা করছি ভালো ফলন পাবো।
একই এলাকার কৃষানী ফাতেমা বেগম বলেন, তার ১ একর জমিতে বারি- ১৪ জাতের সরিষা আবাদ করেছেন। এ বছর অন্য বছরের চেয়ে আবাদ ভালো হয়েছে। তাই বাম্পার ফলন পাবেন বলে জানান তিনি।
এছাড়া, ওই এলাকার কৃষক আনিছ মিয়া ৬ একর ও আব্দুল মজিদ ৪০ শতাংশ জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। এখন সারা গ্রাম যেন হলুদে ছেঁয়ে গেছে। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ক্যামেরা বন্ধি করতে উৎসুক মানুষ ছুটে যাচ্ছেন সরিষা খেতে।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর কবির বলেন, কৃষিমন্ত্রীর অন্যতম এজেন্ডা আগামী ৩ বছরের মধ্যে সরিষার আবাদ ৪০% বৃদ্ধি করতে হবে। এই এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বøক ও উপজেলা পর্যায়ে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ফলে গত বছরের ৭৫৮ হেক্টরের স্থলে বেড়ে এ বছর ১ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রণোদনার আওতায় উপজেলায় ১০০ একরের অধিক এই মাঠে নতুনভাবে সরিষার আবাদ হয়েছে। এমন সরিষার আবাদ হওয়ায় আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে নালিতাবাড়ীর কৃষকরা।