শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে সমতল ভূমিতে বসবাসরত অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আর্থ সামাজিক ও জীবন মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে বিনামূল্যে বিতরণকৃত একটি ষাড়গরু, গোখাদ্য ও গোয়ালঘর নির্মাণের মালামাল নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ১নং পোড়াগাঁও ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হযরত আলীর বিরুদ্ধে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের আলভার্ট মারাক নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে তার নামে বিতরণকৃত গরু ও অন্যান্য মালামাল উত্তোলনের পর মাত্র দশ হাজার টাকা দিয়ে ও সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন তিনি। এমনি লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে।
জানা গেছে, সম্প্রতি উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের অধীনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বরাদ্দকৃত সমতল ভুমিতে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের ৫০ জনের মাঝে একটি করে গরু, ১৫০ কেজি করে গোখাদ্য ও গোয়াল ঘর নির্মাণের জন্য ৫টি খুঁটি, ৫ পাতা ঢেউটিন এবং ১৬০টি ইট বিনামূল্যে বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ লক্ষে ১নং পোড়াগাঁও ইউনিয়ন থেকে তালিকা আহবান করা হলে গত ৭ আগস্ট তালিকা প্রেরণ করেন ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন। তালিকায় উপকারভোগীদের মাঝে ২০১৫ সালে মৃত আন্ধারুপাড়া গ্রামের নির্মলা সাংমার নাম অন্তর্ভূক্ত করেন তিনি।
সম্প্রতি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন দেশের বাইরে চলে গেলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য হযরত আলী। বিতরণের আগের দিন পর্যন্ত নির্মলা সাংমার জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহে ব্যর্থ হয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হযরত আলী মোবাইল ফোনে চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিনের সাথে পরামর্শ করেন। পরামর্শ অনুযায়ী নির্মলা সাংমার নাম পাল্টে দিয়ে একই গ্রামের আলভার্টকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। গত ৩০ আগস্ট সকালে বাড়ি থেকে জনৈক হাবেজ আলীকে দিয়ে ডেকে পাঠিয়ে নিজের মোটরসাইকেলে করে আলভার্ট মারাককে নালিতাবাড়ী নিয়ে আসেন হযরত আলী। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে আলভার্ট মারাক তার নামে বরাদ্দ থাকা গরুসহ অন্যান্য মালামাল উত্তোলন করেন। এরপর আলভার্ট মারাককে হোটেলে নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করিয়ে হাতে ১০ হাজার টাকা তুলে দিয়ে গরুসহ প্রায় অর্ধলাখ টাকার মালামাল হাবেজ আলীকে দিয়ে নিয়ে নেন হযরত আলী। শুধু তাই নয়, হযরত আলী নিজের মোটরসাইকেলে করে পুনরায় আলভার্ট মারাককে তার বাড়ি পৌছেও দেন। এরআগে আলভার্ট মারাকের কাছ থেকে সাদাকাগজে স্বাক্ষরও নেন হযরত আলী।
এদিকে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ফেসবুকের টাইম লাইনে আলভার্ট মারাকের গরু উত্তোলন করে নেওয়ার ছবি প্রকাশ করা হলে এলাকায় বিষয়টি জানাজানি হয়। একপর্যায়ে তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা খোলে বললে বুধবার স্বজনদের সহযোগিতায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন আলভার্ট মারাক।
সুবিধা বঞ্চিত আলভার্ট মারাক জানান, আগের রাতে তাকে ডেকে বাড়ি থেকে বের করে চা পান করিয়ে বিষয়টি জানায় হাবেজ আলী। পরদিন কথামতো হাবেজ আলীতাকে ডেকে এনে নিজে মোটরসাইকেলের পেছনে বসে তাকে মাঝখানেব সানো হয়। মোটরসাইকেল ড্রাইভ করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হযরত আলী। শহরে নিয়ে গরু উত্তোলন করিয়ে হোটেলে খাবার খাইয়ে ও দশ হাজার টাকা হাতে দেওয়া হয় তার। গরু পাওয়ার পর ওই গরু এবং অন্যান্য সরঞ্জাম আলভার্ট মারাকের কাছ থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হযরত আলী নিয়ে তাকে পুনরায় বাড়ি পৌছে দেন।
এলাকাবাসী জানান, ২০১৫ সালে নির্মলা সাংমা মারা যাওয়ার পরও মাত্র একমাস আগে তার নাম সুবিধাভোগীর তালিকা ভুক্তির বিষয়টি রহস্যজনক। চেয়ারম্যান সাহেব শুরু থেকেই বিষয়টি নিয়ে অন্যায়ের আশ্রয় নিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে স্বজনেরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচার দাবী করেছেন তারা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হলে প্যানেল চেয়ারম্যান হযরত আলী সবকিছু অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পোড়াগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন বিদেশে অবস্থান করায় তার মতামত পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ ফায়জুর রহমান লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব দেশের বাইরে আছেন। তিনি দেশে ফিরলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।