দীর্ঘ ১৪ মাসের বেশি বন্ধ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর এই বন্ধে মানসিক অবসাদ, পারিবারিকভাবে বিয়ের চাপ, আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থতাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন দেশের নারী শিক্ষার্থীরা। এসকল বিষয়ে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা তাদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
মাভাবিপ্রবির কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসরত সুহা তার অভিব্যক্তি জানাতে গিয়ে বলেন, “প্রতিটি মেয়েই চায় তার নিজস্ব পরিচয়ে পরিচিত হতে। তাই সে যখন ভার্সিটির প্রথম দিনে এক বুক স্বপ্ন সাথে নিয়ে প্রবেশ করে, তখন তার উদ্দেশ্য থাকে নিজস্ব সত্ত্বা তৈরি করার আর অপেক্ষা করতে থাকে কবে এই ভার্সিটি থেকে বের হয়ে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে পারবে। কিন্তু যখন ভার্সিটি গণ্ডি পার হওয়াটাই অনিশ্চিত হয়ে যায়। দীর্ঘ দেড় বছর ধরে শেষ বর্ষে পরে থাকে তখন সে নিজেই ভুলতে থাকে তার স্বপ্নগুলোকে। পরিবারের কাছে বাড়তি বোঝা না হওয়ার জন্য সারাদিন ক্লাস শেষে যে সামান্য টিউশন করাতো সেটি ও যখন ভার্সিটির সাথে বন্ধ হয়ে যায় তখন জীবনে নেমে আসে হতাশা। আত্মীয়দের মাধ্যমে আসা সম্বন্ধে ” ভালো ছেলে” নামক বিশেষণ তখন আর বিরক্ত লাগলেও বলতে পারছেনা। মুখ বুঝে মেনে নিতে হচ্ছে অনেক ইচ্ছার বিরুদ্ধে চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই দেশ হারাবে অনেক মেধাবীকে। আমরা হারাবো অনেক সহপাঠীকে। আর ভার্সিটি হারাবে একরাশ হাস্য উজ্জ্বল নক্ষত্রদেরকে।”
এ বিষয়ে মাভাবিপ্রবির ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী আমিনা নিপা বলেন,”করোনার পূর্বে লেখাপড়া শেষ করার পর বিয়ের কথা ভাবতেন বাবা-মা,এখন তারা এমন অনিশ্চয়তা দেখে বিয়ের কথা ভাবছেন। দীর্ঘদিন লেখাপড়ার বাইরে থাকায় জ্ঞানের বা মেধার চর্চা সুষম হচ্ছে না। অতিরিক্ত রাত জেগে সোশাল মিডিয়া আসক্তি বেড়ে যাওয়ায় শরীর-মন দুয়েরই ক্ষতি করছে। মধ্যবিত্ত পরিবার হওয়ায়,দীর্ঘদিন এভাবে বসে থাকা ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। এছাড়াও হতাশা বাড়ছে বিয়ের উপযোগী হয়েও বিয়ের প্রতি আপত্তি জানালে পাড়া-প্রতিবেশি,আত্নীয়স্বজনের কাছে বুলিং এর স্বীকার হতে হয়। সমবয়সী সম্পর্কের ক্ষেত্রে লেখাপড়ায় এমন বিলম্ব ঘটায়, ভবিষ্যত জীবনের কথা চিন্তা করে হতাশা, দু:শ্চিন্তা বেড়েই চলেছে,মানসিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।
পরিশেষে অনেকটা ইন্ট্রোভার্ট হয়ে যাচ্ছি,যা একজন বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টের জন্য সুবিধাজনক নয়।”
এছাড়াও মাভাবিপ্রবির বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন,”করোনাকালীন এই সময়ে বেড়ে গেছে বাল্যবিবাহের হার।ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পরিবারের অসচেতনতা এবং অক্ষমতার কারণে মেয়েদেরকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।এদিক দিয়ে হিসেব করলে দেখা যায়,গ্রামের মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় ৩৫%-৪০% শিক্ষার্থীকে পুনরায় বিদ্যালয়ে ফেরত আনা সম্ভব হবে না। যেসকল নারীরা পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখতো এই কোভিডে দীর্ঘ বন্ধে পারিবারিক ও সামাজিক চাপের কারণে তাদের পড়াশোনার অনিশ্চয়তা দেখে বিয়ের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। যার কারণে হতাশা নিয়ে অনেকে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হচ্ছে।”
এদিকে আঁচল ফাউন্ডেশনের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে গত ১ বছরে ১৪ হাজার ৪৩৬ জন নারী-পুরুষ আত্মহত্যা করেছে যা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ৪৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আর এর মধ্যে নারী আত্মহত্যার হার সব থেকে বেশি। সমীক্ষায় বলা হয় করোনাকালে পারিবারিক জটিলতা, সম্পর্কের অবনতি, বিয়ের চাপ, পড়াশোনা নিয়ে হতাশাসহ বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় নারী শিক্ষার্থীরা।
তবে এসকল সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলাসহ উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নেয়া জরুরি বলে মাভাবিপ্রবির এই নারী শিক্ষার্থীরা মনে করে।
#টিডিসি রিপোর্ট