নারায়ণগঞ্জের সিদ্দিরগঞ্জে গোদনাইল এলাকায় শারমিন স্টিল লিমিটেড নামের কারখানায় বিস্ফোরণে দগ্ধ পাঁচজনের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিরা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আছে। দগ্ধ হওয়া পাঁচজনের মধ্যে চারজনের বাড়িই শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে। তাদের প্রথমে মারা যান মোজাম্মেল। গতকাল তার মরদেহ দাফন করার পরদিনই খবর আসে সাইফুল ইসলাম নামে দগ্ধ আরেকজনও মারা গেছেন।
সাইফুলের বাড়ি নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নে। বুধবার (১৮ অক্টোবর) এই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিয়ামুল কাউসার বলেন, ‘গতকাল সকালেই আগুনে দগ্ধ হওয়া মোজাম্মেলের দাফন করা হয়েছে। আর আজ দুপুরেই খবর আসে সাইফুলও মারা গেছেন। আমি পরিবারগুলোর নিয়মিত খোঁজখবর রাখছি।’
চেয়ারম্যান নিয়ামুল কাউসার বলেন, ’আমাদের নালিতাবাড়ীর চারজন দগ্ধ শ্রমিক হলেন, বিশগিরীপাড়া এলাকার মোজাম্মেল হক, বরুয়াজানি গ্রামের সাইফুল ইসলাম, বরুয়াজানি গ্রামের ইকবাল হোসেন ও একই এলাকার জাকারিয়া। তাদের মধ্যে মোজাম্মেল ও সাইফুল মারা গেছেন। বাকি দুজন চিকিৎসাধীন আছে।’
সাইফুলের পরিবার ও এলাকার লোকজন জানায়, জীবিকার তাগিদে ১২ দিন আগে নারায়ণগঞ্জের একটি স্টিল কারখানায় চাকরি নেন সাইফুল। শনিবার (১৪ অক্টোবর) ভোরে গ্যাস বিস্ফোরণে সাইফুল দগ্ধ হয়। পরে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার দুপুরে সে মারা যায়।
তারা আরও জানায়, প্রায় এক মাস আগে বিয়ের কাবিন করেন নিহত সাইফুলের বড় ভাই শাহীন। পরে পরিবারের পছন্দেই পাশের এলাকায় বিয়ে ঠিক করা হয় সাইফুলেরও। পরিবারের ইচ্ছে ছিল আগামী নভেম্বর মাসে একসঙ্গে দুই ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান করে স্ত্রীদের ঘরে তোলা হবে। কিন্তু সাইফুলের আর বিয়ের পিঁড়িতে বসা হলো না। চলে গেল আল্লাহর ডাকে।
নিহত সাইফুলের মা সোফিয়া বেগম পুত্র শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। আর বিলাপ করে বলছেন, ‘কতই আশাই না করছিলাম। আমার দুই পুলার বউ একলগে ঘরে তুলমু। সামনের মাসেই তো একলগে দুই পুলার বিয়ার অনুষ্ঠান করতাম। ছুডু পুলাডা তো আর রইলো না গো। সব শেষ কইরা দিলা আল্লাহ। আমার কইলজার টুকরারে তুমি আগুনে পুড়াইয়া মারলা আল্লাহ। অহন আমি কী নিয়া বাঁচমু। বাবাগো, আমি এমনই হতভাগা মা যে বাঁইচা থাকতে পুলার মুখটাও শেষ বারের মতো দেখবার পাইলাম না। আল্লাহ আমার আয়ুটুকু আমার বাপধনরে দিতা। আমগর সব আশা, সব স্বপ্ন তো শেষ হইয়া গেল। অহন তো আমি জিন্দা লাশ হইয়া বাঁইচা রইলাম।’ সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন এলাকাবাসী ও স্বজনেরা।
স্থানীয় মানবাধিকারকর্মী মো: সুরুজ্জামান বলেন, ‘একই ইউনিয়নের চারজন শ্রমিক কাজ করতে গিয়ে আগুনে পুড়ে দুজন মারা গেল। অবশ্যই তাদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার যথেষ্ট ঘাটতি ছিল। এখানকার ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলের শারমিন স্টিল লিমিটেডকে পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এ চার পরিবারের সব দায়দায়িত্ব নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলের শারমিন স্টিল লিমিটেডকেই নিতে হবে।’