গুজরাটের মেহসানা জেলায় বডনগর স্টেশন। জায়গাটি গত কয়েক বছরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কারণ একটাই, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক সময় চা বিক্রি করতেন সেখানে। স্টেশনটিতে একটি পুরনো দোকান বর্তমানে সংরক্ষিত রয়েছে সরকারিভাবে। যদিও সেখানে চা মেলে না। এটি এখন ভাঙাচোরা টিনের ‘স্মারক’। তাতে লেখা— ‘নরেন্দ্র মোদির চায়ের দোকান। আপনি সিসিটিভি-র নজরে।’
মোদিকে একসময় বলা হতো চা ওয়ালা। ছোটবেলায় গুজরাটে রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে চা বিক্রি করতেন তিনি। পরিবারের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণে তার কাছে এর বিকল্প ছিল না তখন। এমন কথাই প্রচলিত রয়েছে। তবে এখন তিনি ভারতসহ বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম। তাই এখন তা অসংখ্য মানুষের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক।
বেশ কয়েক বছর আগেও এই স্টেশন চত্বরটিতে প্রচুর ভিড় হত। সারি সারি দোকান ছিল চারপাশে। এখন সব উধাও। দুই বছর আগে নরেন্দ্র মোদি গিয়েছিলেন এই স্টেশন চত্বরে। তার আগে ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও রেল মন্ত্রণালয় মিলে ৮ কোটি টাকা খরচ করে গোটা স্টেশনটি নতুন করে সাজায়; কিন্তু ‘মোদি’-র চায়ের দোকানটি রাখা হয়েছে আগের মতোই। সেটি অবিকল পুরনো অবস্থাতেই রয়েছে।
জানা গেছে, ছেলেবেলায় গুজরাটের ভাদনগরের যে দোকানে মোদি চা বিক্রি করতেন সেখানে গড়ে তোলা হচ্ছে পর্যটন স্পট। ভারতের কেন্দ্রীয় পর্যটন ও সংস্কৃতি (স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত) প্রতিমন্ত্রী শ্রী প্রহ্লাদ সিং প্যাটেল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভাদনগরে পর্যটন কেন্দ্রের জন্য জায়গা খুঁজতে গিয়ে তার মাথায় এই ভাবনা আসে। প্রহ্লাদ সিং প্যাটেলের ইচ্ছে, বাইরে থেকে কাঁচ দিয়ে এটি ঘিরে রাখা।
২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, বাদনগর রেলওয়ে স্টেশনে একটি চায়ের দোকানে তার বাবার সঙ্গে চা বিক্রি করতেন তিনি। নির্বাচনে জয়ের পর মোদিকে নিয়ে বিশ্ব গণমাধ্যমে খবর হয়েছিল, ‘চা বিক্রেতা থেকে প্রধানমন্ত্রী’।

বডনগর স্টেশন
আসলেই কি চা বিক্রেতা ছিলেন মোদি?
বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে তথ্য জানার অধিকারে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এই স্টেশনে নরেন্দ্র মোদি চা বিক্রি, এমন কোনো প্রমাণ কি আছে? রেল মন্ত্রণালয়ের উত্তর ছিল— না। মোদি আসলেই চা বিক্রেতা ছিলেন কি না তা নিয়ে বিতর্ক আছে ভারতে।
ভারতীয় এক সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্টেশনের বাইরে এসে প্রথম যে দোকান পাওয়া গেল, সেটি রমনজি তাখাজির। দুই প্রজন্মের দোকান। রমনজির বয়সও ষাট বছরেরও বেশি। রমনজি তাখাজিকে প্রশ্ন করা হলো, নরেন্দ্র মোদিকে কখনো চা বিক্রি করতে দেখেছেন? জবাব এল— ‘আমি কখনো দেখিনি। আগে মোদির বাবার চায়ের দোকান ছিল স্টেশনের বাইরে। যেখানে এখন চায়ের দোকান সাজিয়ে রাখা হয়েছে, সেখানে ছিল না ওটা।’
বড়নগর স্টেশনের পাশেই থাকেন জাসুদ খান। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে স্কুলে পড়েছেন দশ বছর। দু’বছর আগে মোদি যখন বডনগরে এসেছিলেন, তখন দেখাও হয়েছিল তার সঙ্গে। জাসুদ বললেন, সে তো চা বানাতো না! তার জন্য অন্য লোক ছিল। কিন্তু স্টেশনের পাশেই আমাদের বিএন হাইস্কুল। ছুটির পরে সময় পেলে বাবা-কাকাকে সাহায্য করতো সে।’
তবে ভারতের কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি ও পর্যটনমন্ত্রী মহেষ শর্মা বলেছেন, বাদনগর রেলওয়ে স্টেশনে একটি ছোট চায়ের দোকান আছে, সম্ভবত সেখান থেকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী জীবনের যাত্রা শুরু করেছিলেন। আমরা এ চায়ের দোকানটি পর্যটন নিদর্শনে উন্নীত করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য- বাদনগর স্টেশনকে বিশ্বের পর্যটন মানচিত্রে স্থান দেয়া।