কবি জীবনানন্দ দাশ তার কবিতায় লিখেছেন‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়/ মানুষ নয়, হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে/ হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে/ কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল ছায়ায়।’ কবির কবিতার লাইনের মতোই নবান্নে ধরা পড়ে চিরায়ত বাংলার রূপ।
ষড়ঋতুর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। ঋতুবৈচিত্র্যের এ দেশে হাজার বছরের বাঙালিয়ানায় বিভিন্ন সংস্কৃতি ধরা পড়ে ভিন্ন ভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে। আর বাঙালিয়ানার সংস্কৃতি, কৃষ্টিকালচার মিশে আছে এ দেশের মানুষের বিশ্বাস ও মনেপ্রাণে।
নবান্ন হচ্ছে হেমন্তের প্রাণ। নতুন ধানের চাল দিয়ে তৈরি পিঠা, পায়েস, ক্ষীরসহ নানা রকম খাবারে মুখরিত হয়ে ওঠে বাঙালির প্রতিটি ঘর। নতুন ধানের পিঠা-পায়েসের ঘ্রাণে ভরে ওঠে চারপাশ। নতুন ধান ঘরে আসার পর শুরু হয় চালের তৈরি পিঠাপুলি খাওয়ার নবান্ন উৎসব।
ঋতুবৈচিত্র্যে হেমন্তের আগমন ঘটে শীতকে সাথে নিয়েই। কার্তৃকের শেষে এবং অগ্রহায়ণের শুরুতে মাঠে মাঠে ফসলের সোনালী রং চারদিকে নতুন এক বার্তা নিয়ে আগমন ঘটে। এ সময় ফসলের ক্ষেত ভরে ওঠে সোনালি ধানের হাসিতে। সেই সাথে কৃষকের মুখেও হাসি ফোটে সোনালি ফসল ঘরে ওঠার আনন্দে।
তেমনি শেরপুরে আমনের আগাম ফলনে ফসল কাটার ধুম পরেছে। বাড়িতে বাড়িতে আসছে নতুন ধান। নতুন ধানের সুঘ্রাণে শীতের আকাশ মৃষ্ঠ হয়ে উঠেছে। নতুন ধান ওঠার খুশিতে গ্রামবাংলায় চলে নানা উৎসব-আয়োজন।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ মৌসুমে জেলায় বন্যা বা প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হওয়ায় আমনের বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছে কৃষক। ইতিমধ্যে হাইব্রিড ধানিগোল্ড, তেজগোল্ড, এজেড-৭০০৬, উচ্চ ফলনশীল বিনা-৭, বিনা-১১, বিনা-১৬ ও ১৭, ব্রি-ধান ৬২ আগাম জাতের ধান কাটা শুরু করে দিয়েছে তারা। ফলনও পাচ্ছে ভালো। প্রতি ৫ শতাংশে ৩মণ করে ফলন হচ্ছে। আগাম জাতের ধান কেটে এসব জমিতে অতিরিক্ত ফসল হিসেবে চাষ করা হবে সরিষা, আলু, রসুন ও শাক সবজি। আবার সরিষা ও শাক-সবজির আবাদ ঘরে উঠিয়ে একই জমিতে করা হবে ইরি-বোরো ধানের আবাদ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড: মুহিত কুমার দে শেরপুর টাইমসকে বলেন, দেশের খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ ও উদ্বৃত্ত কয়েকটি জেলার মধ্যে সীামন্তবর্তী শেরপুর জেলা একটি। চলতি বছরে জেলায় ৯১ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে।