নদীদূষণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ‘নদীকেন্দ্রিক জীবন ও জীবিকা’ শিরোনামে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়ামের রিভার টকি/নদী কথন অনুষ্ঠিত
আজ ১৩অক্টোবরবৃহষ্পতিবার, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম এর আয়োজনে ‘নদীকেন্দ্রিক জীবন ও জীবিকা’শীর্ষক অষ্টম নদীকথন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহষ্পতিবার দুপুর ১২:৩০ টায় তুরাগ নদীর তীরবর্তী শ্মশানঘাট, কাউন্দিয়া, মিরপুর, ঢাকা এলাকায় নদীকথন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
কনসোর্টিয়ামের প্রধান শরীফ জামিল এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিতনদীকথনে আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ এজাজ, চেয়ারম্যান, রিভার এন্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টার, মোঃ মনির হোসেইন, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশন, আমজাদ আলী লাল, সাধারন সম্পাদক, আমীন বাজার ব্রিজ ঘাট শ্রমিক ইউনিয়ন এবং মাঝি নিত্য বাবু রাজবংশী ।এছাড়াও নদীদূষণ রোধে কাজ করেন এরকম স্থানীয় কমিউনিটি র্ভিত্তিক সংগঠনসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দ অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণ করেন।
নদীকথন অনুষ্ঠানে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, ‘‘যদি নদী রক্ষা করা না যায় তাহলে নদীমাতৃক দেশকেও রক্ষা করা যাবেনা। তাই নদীদূষন প্রতিরোধ করতে হবে এবং নদীকেনিদ্রক জীবিকা পুনরায় ফিরিয়ে আনতে হবে। এই নদীরক্ষার জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহন করা হচ্ছে, তবে এই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহনের জন্যপ্রথম নদীপাড়ের মানুষদের মতামতা নেয়া দরকার,কারন তারা ভূক্তভোগীএবং তারাই নদী রক্ষার জন্য সঠিক পরামর্শ দিতে পারবে। নদী রক্ষার জন্য প্রনীত প্রকল্পসমূহনদী রক্ষার জন্য নাকি নদীকে ধবংস করার জন্য তা বিবেচনা করেপদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। কাজেই আমরা চাই নদী রক্ষায় গণমানুষের সম্পৃক্ততা, নদী রক্ষায় যারা কাজ করে তাদের জবাবদিহিতা এবং সর্বোপরি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহন যার ফলে নদীকেন্দ্রিক জীবন ও জীবিকা রক্ষা করা সম্ভব।’’
নদীকেন্দ্রিক জীবন ও জীবিকা প্রসঙ্গে মোহাম্মদ এজাজবলেন, ‘‘নগরায়নের একটি সেবা হলো মাছ সরবরাহ নিশ্চিত করা যা মূলত জেলে সম্প্রদায় করে থাকে কিন্ত এই জেলে সম্প্রদায় বছরে আট মাস বেকার থাকছে কারন নদীতে পর্যাপ্ত পরিমানে মাছ নেই , এর প্রধান কারন হলো নদীদূষণ।তুরাগ নদীর সাথে ২১ টা জেলে গ্রাম যুক্ত আছে যাদের জীবিকা নদীর সাথে যুক্ত। এরা মূূলত রাজবংশী, কিছু নদী ভাঙ্গা অভিবাসী এবং বর্মন জনগোষ্ঠী।জেলে ছাড়াও শ্রমিক আছে যারা নদীর ঘাটে কাজ করে, তুরাগ নদীতে ১০০ টি ঘাট আছে যেখানে অনেক ঘাটশ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করে। তাছাড়া একসময় নদী কেন্দ্রিক যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল যা এখন কমে যাচ্ছে যার ফলে মানুষের আয়ের পথসমূহ সীমিত হয়ে যাচ্ছে। নদীদূষণের কারনে নদীর সাথে যাদের জীবন ও জীবিকা জড়িত তারা আজ অনিশ্চিত জীবন যাপন করছে। এই সম্প্রদায়কে উন্নয়ন পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত করা এবং জেলে সম্প্রদায়ের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে আলোচনায় এনে উন্নয়ন পরিকল্পনা করলে নদীকেন্দ্রিক জীবন ও জীবিকা রক্ষা করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।’’
মোঃ মনির হোসেন বলেন, ‘‘নদীদূষনের কারনে জীবিকা হারিয়ে যাচ্ছে, জীবিকা হারোনোর ফলে জীবন হুমকীর মুখে পরছে। ঢাকার তুরাগ নদী সবচেয়ে দূষিত নদী কিন্তু এই নদীর সাথে জড়িত মাছ, কৃষক এবং জেলে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অপরিকল্পিত ও সমন্বয়হীন তুরাগ নদী রক্ষার উদ্যোগ এই সমস্যার জন্য অনেকাংশে দায়ী। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনায়েরসাথে মাঝি সংগঠনের মধ্যে একটি কার্যকর পার্টনারশীপ তৈরীর মাধ্যমে নদীকে দূষনের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। সর্বোপরি সমন্বিত উদ্যোগ গহনের মাধমে নদীর উপরে গণমানুষের যে অধিকার তা নিশ্চিত করতে হবে”।
আলোচ্য বিষয়েআমজাদ আলী লাল বলেন,‘‘নদীদূষনের কারনে নদীকেন্দ্রিক পেশাসমূহ বিলুপ্ত হতে চলেছে। সাগড় পাড়ের জেলেদের ঠএঋ কার্ড দেয়া হয় অথচ যারা ছোট নদীর পাড়ে থাকে তাদের জীবিকা রক্ষা এবং প্রনোদনার ব্যবস্থা করারকোন উদ্যোগ নেই।আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কি করবে তা নিয়ে ভাবনা হয় তবে কোন সমাধান খুঁজে পাইনা’’।
মাঝি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি নিত্য বাবু রাজবংশী বলেন, ‘‘এই এলাকার মুনষের পেশা হলো মাছধরা এবং মাছ বিক্রি করা। অনেক দিন আগে এলাকার মানুষ প্রচুর পরিমানে মাছ পেত এবং অনেক আয় করতো, তাই এলাকার জেলেসম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করেনি। কিন্তু এখন এই নদীর পানি দূষিত তাই এখানে মাছ নাই বললেই চলে তাই এলাকার মানুষ বেকার জীবন যাপন করছে যেহেতু তাদের অন্য কোন কাজ করার দক্ষতা নেই। এই এলাকার প্রায় ৫০০০ পরিবারের লোকজন অনেক কষ্টে দিন যাপন করছে এমনকি তাদের দুইবেলা খাবার জুুটেনা। একসময় যে জেলেরা পুষ্টি সরবরাহ করতো তারাই এখন আর পুষ্টি পায়না কারন তাদের যে পেশা ছিল তা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে নদীদূষনের কারনে।’’
নদীদূষণের প্রভাবে জীবন ও জীবিকায় যে সকল সমস্যা তৈরী হচ্ছে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে করনীয় কি তা তুলে ধরাই নদীকথন আয়োজনের অন্যতম উদ্দেশ্য।