এ দেশে সাধারণত পৌষ থেকে ফাল্গুন মাসের মধ্যে বাঙ্গি চাষ হয়। কিন্তু বৈশাখে বাঙ্গি চাষ করে অনেকে লাভবান হয়েছেন। অসময়ের বাঙ্গি চাষে কৃষকরা প্রায় ছয় গুণ লাভ পাচ্ছেন। এমন এক চাষী শেরপুর-জামালপুর জেলার সীমান্ত এলাকা তুলসিরচর ইউনিয়নের ডিগ্রিরচর এলাকার কৃষক সোহাগ মিয়া। তিনি এক যুগ ধরে বাঙ্গি চাষ করে আসছেন। তিনি এ বছর ৪ বিঘা জমিতে আগাম বাঙ্গি চাষ করেছেন। বাঙ্গির ফলন খুবই ভালো হয়েছে। এবারের মত ভালো ফলন তিনি গত এক যুগেও পাননি বলে জানান।
শেরপুর-জামালপুর জেলার সীমান্ত এলাকার চর গুলোতে রোপন করা বাঙ্গি সুস্বাদু ও নিরাপদ হওয়ায় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাঙ্গিতে লাভ বেশি পাওয়ায় তিনি নিয়মিত বাঙ্গি চাষ করছেন। অসময়ে বাঙ্গি চাষ করে সোহাগ এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। অনেকেই তার কাছে অসময়ে বাঙ্গি চাষের পরামর্শ নিতে আসছেন। সময়ের চেয়ে অসময়ে চাষে যেমন বেকারত্ব ঘোচে, তেমনি দামও ভালো পাওয়া যায়। প্রতিদিন স্থানীয় হাটে বাঙ্গি বেচেন তিনি। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা তার কাছথেকে বাঙ্গি কিনে নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে। বিশেষ করে শেরপুর, জামালপুর ও ময়মনসিংহ শহরে তার বাঙ্গির সুনাম ছড়িয়ে আছে।
নকলা বাজারের ফিডার রোডে ভ্যানে করে বাঙ্গি বিক্রি কালে সোহাগের ছোট ভাই আশিক মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি জানান, জমি তৈরী থেকে শুরু বাঙ্গি বিক্রি করা পর্যন্ত তাদের ৪ বিঘা জিমতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। তাদের ক্ষেতের বাঙ্গি এক সপ্তাহ ধরে পাকতে শুরু করেছে এবং নিয়মিত বিক্রি হচ্ছে। গত ৭ দিনে তিনি কম-বেশি ৬০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি করা হয়েছে। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা না হলে, এখনো ক্ষেতে যা রয়েছে তাতে আরও পনেরো দিন পর্যন্ত বাঙ্গি তুলা সম্ভব। তাতে ওই ক্ষেত থেকে আরো অন্তত এক লাখ ৮০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি জানান।
বাঙ্গি চাষী সোহাগ মিয়ার দেওয়া হিসেব মতে তার ৪ বিঘা জমিতে ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি করতে পারবেন। ফলে বাঙ্গিতে তিনি ৬ গুণ লাভ পাবেন বলে তিনি আশা করছেন। এমনকি এর আগেও তিনি এমন লাভ পেয়ে আসছেন। বাঙ্গি চাষে তার লাভ দেখে এলাকার আনেকে এখন চাষে ঝুঁকছেন। অন্যরা বানিজ্যিক ভাবে চাষ শুরু না করলেও, বাড়ির আঙ্গিনায় বাঙ্গি চাষ করে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন।
অসময়ে বাঙ্গি চাষে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দানকারী উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উমেদ আলী জানান, বাঙ্গি চাষে সফলতা আনার লক্ষে কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নকলা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস জানান, অসময়ে বাঙ্গি চাষ করে যে কেউ সফল হতে পারেন। বাড়ির আঙ্গিনায় বাঙ্গি লাগিয়ে সফলতা পাওয়ায় অনেকে আগ্রহী হয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত উপজেলায় বানিজ্যিক ভাবে বাঙ্গি চাষ শুরু হয়নি। তবে উপজেলার চন্দ্রকোনা, চর অষ্টধর, পাঠাকাটা ইউপি এলাকা গুলো চরাঞ্চল হওয়ায়, সেসব এলাকার জমিতে বাঙ্গির ভালো ফলন হয়। তিনি আরো জানান, বাঙ্গি চাষে কৃষকদের আগ্রহী করতে কৃষি বিভাগ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।