শেরপুরে পুলিশের এক সাবইন্সপেক্টার (এসআই) এর বিরুদ্ধে প্রতারণা করে তরণীকে ধর্ষণ ও বিয়ের নাটক এবং পরবর্তীতে এসব অস্বীকার করায় আদালতে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ওই তরুণী। আদালতে মামলা দায়ের করার পর আদালত ওই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে।
বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে নাতিাবাড়ীতে আদালতের নির্দেশ মতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলার তদন্ত কাজের অংশ হিসেবে নালিতাবাড়ী পৌরশহরের গড়কান্দা আনসার ক্যাম্প এলাকায় ভাড়া বাসা পরিদর্শন, ভিকটিমের মা ও বাসার মালিকের সাক্ষ্য গ্রহন করেছেন পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন শেরপুর- জামালপুর জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন তদন্তের দায়িত্বভার পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্ত কাজ শুরু করা হয়েছে।
এদিকে, গত ১৫ অক্টোবর এসআই এর বিরুদ্ধে নালিতাবাড়ী উপজেলার বাসিন্দা এক তরুণী (২২) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি দায়ের করেন।
শেরপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোঃ আখতারুজ্জামান মামলাটি আমলে নিয়ে সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে জামালপুরের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশ (পিবিআই) কে নির্দেশ দেন। অভিযুক্ত পুলিশের উপ-পরির্দশক (এসআই) মো. সবুর উদ্দিনকে বর্তমানে পুলিশ লাইন্সে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার শ্যামগঞ্জ উত্তর বাজার এলাকার আব্দুল হাইয়ের ছেলে। তিনি শেরপুরের নকলা থানায় কর্মরত ছিলেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোকলেছুর রহমান আকন্দ জানান, ২০১৭ সালে নালিতাবাড়ী থানায় কর্মরত ছিলেন এসআই সবুর। সে সময় তিনি সংশ্লিষ্ট তরুণীর করা একটি শ্লীলতাহানির মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন। মামলার তদন্ত করার সুবাদে দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে। ঘনিষ্ঠতার এক পর্যায়ে বাদীর স্বামীর সাথে তার বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে। পরে এসআই সবুর ভুক্তভোগীর সাথে বিয়ের নাটক সাজিয়ে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে বসবাস করতে থাকেন। স¤প্রতি এসআই সবুর পার্শ্ববর্তী নকলা থানায় বদলি হয়ে গেলে গত ১ অক্টোবর ভুক্তভোগী তরুণী তার ভরণপোষণ দাবি করলে এসআই সবুর তাকে জানিয়ে দেন যে তাদের কোন বিয়ে হয়নি। পরে ওই তরণী আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
অপরদিকে, অভিযোগকারী তরুণী জানায়, অভিযুক্ত এসআই তার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে থাকার সুযোগে তার সাথে ভুলিয়ে-ভালিয়ে সম্পর্ক করে পরপর দুই স্বামীর সংসারে ছাড়াছাড়ি করান এবং তার কাছ থেকে কাবিন নামায় স্বাক্ষর নিয়ে ভাড়া বাসায় সংসার শুরু করেন। স¤প্রতি নকলা থানায় বদলি হওয়ার পর থেকে তাকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে অস্বীকার করেন ওই এসআই। তিনি বলেন, আমার সাথে বিয়ের নামে প্রতারণা করে আমাকে দীর্ঘ দিন ধরে ধর্ষণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, অভিযুক্ত এসআই সবুর জানান, তার সাথে ধর্ষণের কোন ঘটনা ঘটেনি। আমি তাকে বিয়ে করেছিলাম এবং কিছুদিন সংসারও করেছি। কিন্তু তার নৈতিক অধপতনের কারণে তালাক দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমি বিয়ে করার পরও তার অন্যত্র কাবিনামা রয়েছে, যা পরবর্তীতে আমি জানতে পারি।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই জামালপুরের পুলিশ পরিদর্শক ফিরোজ হোসেন জানান, কেবলমাত্র তদন্তকাজ শুরু করা হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।