করোনাকালে জনস্বাস্থ্য রক্ষা এবং অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধের জন্য কঠোরভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তথ্য অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন তিন কোটি ৮৪ লাখ মানুষ। আর সরাসারি তামাকে আসক্ত প্রায় চার কোটি প্রাপ্তবয়ষ্ক লোক।
সোমবার বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের গুরুত্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধে এসব তথ্য জানানো হয়।
তাই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে শক্তিশালী করতে এর ছয়টি ধারা সংশোধনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে আলোচনা সভা থেকে।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী।
তিনি বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ধূমপায়ীদের মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা ১৪ গুণ বেশি। তামাকের এসব ক্ষতি থেকে জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক বলেন, দেশে বিদ্যমান ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনটির বিভিন্ন দিক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তারপরও কিছু জায়গায় দুর্বলতা রয়েছে। এই দুর্বলতাগুলো সংশোধন করা হলে আইনটি আরও কার্যকর হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএমএ’র সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন।
তিনি বলেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের উত্থাপিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনীগুলো সংযোজন করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশিত ২০৪০-এ তামাক নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল (রিজভী) বলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনীগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করে তা দ্রুত বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে।
এ সময় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীর দাবি জানান বক্তারা। এ ছয়টি দাবি হলো- পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ‘ধূমপান এলাকা’ রাখার বিধান বিলুপ্ত করা, দোকানে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সিএসআর নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট আমদানি, উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে মুদ্রিত সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্ক বার্তার আকার বৃদ্ধি করা এবং তামাক দ্রব্যের খুচরা বিক্রি নিষিদ্ধ করা।
পাশাপাশি আলোচকরা আরও বলেন, শুধু আইন করলেই হবে না বরং আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তামাক শিল্পে সব আর্থিক সুবিধা বন্ধ করতে হবে। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে পাঠ্যপুস্তকে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সভা সঞ্চালনা করেন বিএমএ মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, সোসাইটি অব মেডিসিনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির ও সোসাইটি অব রেসপিরেটরী মেডিসিনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মির্জা হিরন এবং বিএমএ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা।
#ঢাকাটাইমস