খাদ্য উদ্বৃত্তের জেলা হিসেবে পরিচিত শেরপুর। কিন্তু গেল বন্যার কারণে এ জেলায় সবজি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। চাষিরা জানান, নানা বাধা পেরিয়ে সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক রাখতে তারা মাঠে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে দেশের বাজারে পর্যায়ক্রমে যোগ হবে এই জেলার দুই লাখ ৯৯ হাজার ৬৭০ মেট্রিক টন সবজি।
এছাড়াও টমেটো ৭৮০ হেক্টরে ২১ হাজার ৮৩ মেট্রিক টন, সিম এক হাজার ২৯০ হেক্টরে ১৭ হাজার ৯০৫ মেট্রিক টন, ফুলকপি ৩৭৫ হেক্টরে নয় হাজার ৭৩৯ মেট্রিক টন, বাঁধাকপি ৩৬৭ হেক্টরে ১৪ হাজার ৮৬৪ মেট্রিক টন, মুলা ৫৮৫ হেক্টরে ১৩ হাজার ৬৪২ মেট্রিক টন, লাউ ৮৫০ হেক্টরে ২৯ হাজার ৩০৮ মেট্রিক টন, চাল কুমড়া ২৯৭ হেক্টরে আট হাজার ১২৫ মেট্রিক টন, মিষ্টি কুমড়া ৪০০ হেক্টরে ১৪ হাজার ৮৭২ মেট্রিক টন, পটল ১০৫ হেক্টরে ২১ হাজার ৬৫ মেট্রিক টন, বরবটি ৬২ হেক্টরে ৯৫৫ মেট্রিক টন, শসা ৬১৫ হেক্টরে ১০ হাজার ৩৯৪ মেট্রিক টন, ঝিঙ্গা ২৩৭ হেক্টরে তিন হাজার চার মেট্রিক টন, ডাটা ৪২৫ হেক্টরে ১১ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন, গোল আলু ৪৯৫০ হেক্টরে এক লাখ তিন হাজার ৭০ মেট্রিক টন, কাকরোল ৭২ হেক্টরে ৭৩০ মেট্রিক টন, গাজর ১৬১ হেক্টরে দুই হাজার ৮৭২ মেট্রিক টন, লাল শাক ২৮৮ হেক্টরে তিন হাজার ৫৮৬ মেট্রিক টন, চিচিঙ্গা ১২৭ হেক্টরে দুই হাজার ৬২৮ মেট্রিক টন, পুঁই শাক ৫৫ হেক্টরে ৩১০ মেট্রিক টন, গিমাকলমি ২৮ হেক্টরে ২২২ মেট্রিক টন, পালং শাক ৮৪ হেক্টরে ৩৪৫ মেট্রিক টন, ধনিয়াপাতা ১৫ হেক্টরে ১৪ হাজার ৩১ মেট্রিক টন, খিরা এক হেক্টরে পাঁচ মেট্রিক টন, করলা ২২৫ হেক্টরে চার হাজার ৯৫৫ মেট্রিক টন, মটরশুটি ৩৬৭ হেক্টরে ১৪ হাজার ৮৬৪ মেট্রিক টন, পেঁপে ৩০ হেক্টরে ৭১০ মেট্রিক টন, ধুন্দল ৪৫ হেক্টরে ৩০০ মেট্রিক টন, সজিনা ১০ হেক্টরে ৮৮ মেট্রিক টন, মুখী কচু ১৮০ হেক্টরে ৩ হাজার ৬৮০ মেট্রিক টন, গাছ আলু ১৯ হেক্টরে ১৪০ মেট্রিক টন, ওল ৩৭ হেক্টরে ৪৬৩ মেট্রিক টন, পঞ্চমুখী ২৫ হেক্টরে ৫৬৫ মেট্রিক টন, পানি কচু ১২৫ হেক্টরে ২ হাজার ৬৩০ মেট্রিক টন, মরিচ (কাঁচা) ৪৪৫ হেক্টরে ৩ হাজার ৫৬০ মেট্রিক টন, মরিচ (শুকনা) ৫১৫ হেক্টরে এক হাজার ৩০ মেট্রিক টন, পেঁয়াজ ৬৭০ হেক্টরে ৬ হাজার ৬৯৮ মেট্রিক টন, রসুন ৩০০ হেক্টরে এক হাজার ৫০০ মেট্রিক টন, আদা ৪৪০ হেক্টরে ৭২০ মেট্রিক টন, হলুদ ৭৬৪ হেক্টরে ১৪ হাজার ৯২০ মেট্রিক টন, আন্যান্য ১০২ হেক্টরে দুই হাজার মেট্রিক টন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
শ্রীবরদীর চৈতাজানি গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম ও উমেদ আলী বলেন, প্রায় প্রতি বছর অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে আগাম সবজি উৎপাদন করে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ নানা জেলায় শেরপুরের সবজি সরবরাহ হতো। কিন্তু গেল বন্যার কারণে তাদের প্রস্তুতকৃত জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে বন্যা পরবর্তী সময়ে তারা ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করলেও সবজি ক্ষেতে দেখা দেয় পোকা আর ছত্রাকের আক্রমণ। এই কারণে নির্দিষ্ট সময়ে বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ শীতকালীন সবজি সরবরাহে তারা ব্যর্থ হন। এ সময় স্থানীয়দের নির্ভর করতে হয় জেলার সীমান্তবর্তী তিন উপজেলার গারো পাহাড়ে উৎপাদিত সবজির উপর।
সদর উপজেলার কৃষক শাহজাহান, খোকন মিয়া, রুবেল ফকির আলীসহ আরো অনেকেই বলেন, বন্যার কারণে তারা পিছিয়ে পড়লেও উৎপাদন লক্ষমাত্রা ঠিক রাখতে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। সহসাই তারা ফুলকপি, বাধাকপি, লাউ, শশা, করলা, শিম, চিচিঙ্গা, বরবরটি, বেগুনসহ ৩১ প্রকারের শাক সবজি বাজারজাত করতে পারবেন।
অন্যদিকে স্থানীয় পাইকার রজব আলী বলেন, হঠাৎ করে সবজির বাজার চড়া হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীকভাবে তিনি ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
আরেক পাইকার মজিবর মিয়া বলেন, প্রতি বছর শীতকালীন সবজি বিক্রি করে মোটামোটি ভালই লাভ হতো। কিন্তু এবার তার এক লাখ ১৭ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। বন্যার কারণে সবজি সরবরাহ স্বাভাবিক পর্যায়ে না থাকায় এই ক্ষতির শিকার হন বলে জানান তিনি।
শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার বলেন, আগামী ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে বাজারে সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক হবে এবং ওই সময়ে দাম সহনীয় পর্যায়ে আসবে। তিনি জানান, এবার বন্যার কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অনেকেই সবজি আবাদ বাদ দিয়ে সরিষা, ডাল, তেল ও মসলা জাতীয় পণ্য উৎপাদনের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।