কথায় আছে, মাছে ভাতে বাঙালি। পাতে মাছ না হলে আমাদের চলে না। মাছ উৎপাদনে পৃথিবীতে চতুর্থ স্থানে রয়েছি আমরা। আমাদের দেশে চাষ ছাড়া বা চাষকৃত দু’ভাবেই মাছ উৎপাদিত হলেও যে মাছ চাষ করা হয়নি তাকে আমরা দেশি মাছ বলে থাকি। আর দেশি মাছ স্বাদে ও পুষ্টিতে অনন্য হওয়ায় এর দাম চাষ করা মাছের থেকে অনেক বেশি।
বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে, বিশেষ করে যেসব অঞ্চল বর্ষার পানিতে ডুবে ছিল, সেসব এলাকায় মাছ ধরার ধুম পড়ে যেত আগে। তবে এখন আর সব অঞ্চলে মাছ ধরার ধুম পড়ে না। যেমন আমাদের আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) অঞ্চলে বর্ষার শেষের দিকে মাছ ধরার ধুম পড়ে যেত। সেটা নরসিংদী থেকে নারায়ণগঞ্জ (মদনগঞ্জ) পর্যন্ত রেললাইনের দু’ধারে ৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাস এলে সকালে শত শত লোক ওছা, জালি ইত্যাদি নিয়ে নেমে পড়ত। প্রত্যেকেই মাঝারি পাতিলের এক পাতিল (ডেকচি) মাছ বাড়িতে নিয়ে যেত। এসব মাছের মধ্যে ছিল কই, শিং, পুঁটি, ভেদা, টেংরা, খইলসা/খল্লা, ছোট চিংড়ি, বাইম ইত্যাদি। এসব মাছ ছিল অত্যন্ত সুস্বাদু। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, এখন বর্ষাকাল আসে ঠিকই; কিন্তু দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে আগের মতো আর দেশি মাছ পাওয়া যায় না। কোনো কোনো অঞ্চলে একেবারেই পাওয়া যায় না। পুকুর থেকে বের হয়ে আসা চাষ করা মাছের দু’একটা পোনা পাওয়া যায়। দেশি মাছ কমে যাওয়ার প্রধান কারণ ফসলে কীটনাশক ব্যবহার, কল-কারখানা থেকে বর্জ্য পদার্থ, ডাইংয়ের দূষিত পানি খালে-বিলে, নদীতে ফেলা এবং সেচের মাধ্যমে পানিশূন্য করে পুকুর, বিল, হাওর ইত্যাদির মাছ ধরা।
একটা বিলের/চকের মধ্যে যদি ১০টি পুকুর থাকে এবং ১০টি পুকুরই যদি সেচের মাধ্যমে পানিশূন্য করে মাছ ধরা হয় তাহলে ওই বিলে/চকে মাছ নতুন করে কিভাবে জন্ম নেবে? বর্তমানে হাজার হাজার পুকুর, বিল, হাওর পানিশূন্য করে মাছ ধরা হচ্ছে। ফলে ৩-৪ ইঞ্চির টাকি মাছ এবং ১০-১২ ইঞ্চির বোয়াল মাছ ধরা পড়ছে, যেগুলো কিছুদিন পর বড় হয়ে খাওয়ার উপযুক্ত হতো। কিন্তু আমরা মাছগুলোকে বড় হতে দিচ্ছি না। পরিণামে বাজারে দেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু পাওয়া গেলেও সেগুলোর দাম অনেক বেশি।