দেশের রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টভক্তদের জন্য পর্তুগালের ফাতেমা নগরীর আদলে ও অনুকরনে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তঘেঁষা বারমারী সাধু লিও’র খ্রিষ্টান ধর্মপল্লীতে স্থাপন করা হয়েছে ফাতেমা রাণীর তীর্থস্থান। এই তীর্থ স্থানে আগামী বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) শুরু হচ্ছে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক তীর্থ উৎসব। এ বারের তীর্থ উৎসবের মুলসুর হলো- ‘সিনোডাল মন্ডলীতে মিলন, অংশগ্রহন ও প্রেরণকর্মে ফাতেমা রাণী মা মারিয়া।’
প্রতি বছর ধর্মীয় চেতনায় প্রতি বছর শান্তিপুর্ণভাবে তীর্থযাত্রা সুসম্পন্ন করায় এই তীর্থস্থানে দেশীবিদেশী তীর্থযাত্রীদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এই তীর্থস্থানটিকে আন্তর্জাতিক তীর্থস্থানে রূপান্তরিত করতে স্থাপন করা হয়েছে ৪৮ ফুট উচু মা মারিয়ার মুর্তি। এছাড়াও যীশু খ্রিষ্টের দুটি বড় ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে এখানে।
রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টভক্তদের দাবীর প্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সালে পাহাড়ঘেরা মনোরম পরিবেশে এই তীর্থস্থানটি তীর্থস্থান স্থাপন করা হয়। ময়মনসিংহ খ্রিষ্টধর্ম প্রদেশের তৎকালীন প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ. গমেজ বারমারী সাধু লিও’র ধর্মপল্লীতে ফাতেমা রাণীর তীর্থ স্থান হিসেবে ঘোষনা করেন। এ তীর্থস্থানের ২ কিলোমিটার পাহাড়ী টিলায় ক্রুশের পথ ও পাহাড়ের গুহায় স্থাপন করা হয়েছে ৪৮ ফুট উচু মা-মারিয়ার মুর্তি। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুই দিনব্যাপী বার্ষিক তীর্থ উৎসব পালিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আগামী ২৬-২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক তীর্থ উৎসব। এতে দেশি বিদেশি হাজার হাজার খ্রিষ্টভক্তরা অংশ গ্রহন করে থাকেন। তীর্থ উৎসবে মহাখ্রিষ্টযাগ, গীতি আলেখ্য, আলোর মিছিল, নিশীজাগরন, নিরাময় অনুষ্ঠান, পাপ স্বীকার, জীবন্ত ক্রুশেরপথসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদী অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এদিন খ্রিষ্টভক্তরা নিজেদের পাপ মোচনে মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোর মিছিলে অংশ গ্রহন করে প্রায় ২ কিলোমিটার পাহাড়ী ক্রুশের পথ অতিক্রম শেষে মা-মারিয়ার মুর্তির সামনের বিশাল প্যান্ডেলে সমবেত হয়ে নির্মল হৃদয়ের অধিকারীনি, ঈশ্বর জননী, খ্রিষ্টভক্তের রাণী, স্নেহময়ী মাতা ফাতেমা রাণীর কর কমলে ভক্তিশ্রদ্ধা জানায় ও তার অকৃপন সাহায্য প্রার্থনা করে থাকেন।
তীর্থ উৎসবের সমন্বয়কারী রেভারেন্ট ফাদার তরুণ বনোয়ারী বলেন, ধর্মীয় চেতনায় দেশি বিদেশি হাজার হাজার খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের অংশ গ্রহনের মধ্য দিয়ে প্রতি বছর বার্ষিক তীর্থ উৎসব পালিত হওয়ায় বর্তমানে এটি আন্তর্জাতিক মহাতীর্থস্থান হিসেবে রুপ পেতে যাচ্ছে। ভক্তদের আগমন বাড়ায় বর্তমানে এই তীর্থস্থানে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৮ ফুট উচ্চতার ফাতেমা রাণীর মা মারিয়ার মুর্তি নির্মান করা হয়েছে। এই স্থানটি খ্রিস্টভক্তদের জন্য একটি পবিত্র ধর্মীয় স্থান। এখানে এসে তাদের ধর্মীয় অনুভুতি জাগরিত করে বিভিন্ন প্রার্থনা করে থাকে। এতে খ্রিস্টভক্তরা আত্মার প্রশাস্তি পায়।
তিনি আরো বলেন, এবারের তীর্থ উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুড়া ক্যাথলিক ডাইসিসের একটি ধর্মপল্লীর পালপুরোতি রেভারেন্ট ফাদার টমাস মানকিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ময়মনসিংহ খ্রিস্টধর্ম প্রদেশের বিশপ পনেন পৌল কুবি সিএসসি। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবারের তীর্থ যাত্রায় ৩০/৪০ হাজার তর্থীযাত্রীর অংশগ্রহন করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, রাজধানী ঢাকা শহর থেকে ২২০, ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহর থেকে প্রায় ১০০, শেরপুর জেলা শহর থেকে ২৫ ও নালিতাবাড়ী উপজেলা শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার উত্তরে বাংলাদেশ-ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তঘেঁষা সবুজ শ্যামলীময় পাহাড়ঘেরা মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেেেশর অপুর্ব লীলাভুমি বারমারী খ্রিষ্টধর্মপল্লীতে এ তীর্থস্থানের অবস্থান। ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশের ১৪টি ধর্মপল্লীর ও সারাদেশের হাজার হাজার খ্রিষ্টভক্তদের প্রাণের দাবি ছিল মা মারিয়াকে ভক্তি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য উপযুক্ত স্থান লাভের। আর বারমারীতে এ স্থান পেয়ে খ্রিষ্টভক্তরা যেন মহাখুশি।